কালোব্যাজ ধারণ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতারা

৩০ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতি’র প্রতিবাদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মানববন্ধন

৩০ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতির’ প্রতিবাদে ১ ঘণ্টার কালোব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে  এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কিন্তু এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন, মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম,  জোটের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান মান্না,  আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ,  মোস্তফা মহসিন মন্টু, জহির উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ড. জাহিদুর রহমান। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কি জোটের কার্যকারিতা হারিয়ে যাচ্ছে?

তবে কর্মসূচিতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত না থাকার কারণ ব্যাখা করলেন জোটের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব। তিনি বলেন,  এটা নিয়ে পরে অনেক কথা হতে পারে।  আমি কিছুক্ষণ আগে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করে এসেছি।  তার ডান পায়ে অপারেশন করা হয়েছে। সেই পায়ের ব্যথা বেড়েছে। এই কারণে তিনি কর্মসূচিতে আসতে পারেননি।  আর মির্জা ফখরুল বিদেশে আছেন এবং  কাদের সিদ্দিকী পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানের কারণে আসতে পারেননি।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্রে জানা গেছে,  মাহমুদুর রহমান মান্না ও মোস্তফা মহসিন মন্টু বিদেশে আছেন। আর ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ,  জহির উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ড. জাহিদুর রহমান দেশে থেকেও কর্মসূচিতে আসেননি। 

গণফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মোস্তফা মহসিন মন্টু তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। সেখান থেকে মেয়েকে দেখতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে।

আর ঐক্যফ্রন্টের দফতরের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাও বিদেশে অবস্থান করছেন।

ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের প্রশ্ন – নেতারা যদি বিদেশে বা দেশে অবস্থান করে কর্মসূচিতে আসতে না পারেন তাহলে কর্মসূচি দেওয়ার দরকার কী? ঐক্যফ্রন্টের বিরোধীদের সমালোচনা করার সুযোগ দেওয়ার দরকার কী?  

নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, এ কর্মসূচি যেহেতু ৩০ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতির’ প্রতিবাদের দেওয়া হয়েছে, তাহলে যে ৩ শ’ প্রার্থী নির্বাচন করেছেন তারা কেন কর্মসূচিতে আসেনি। শীর্ষ নেতারা না হয় বিদেশে বা ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি। সারাদেশে প্রার্থীরা কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকলে আজকের কর্মসূচি আলাদা গুরুত্ব পেতো।  অন্তত ঢাকার ২০ টি আসনের প্রার্থীদের কর্মসূচিতে থাকা দরকার ছিল।

গণফোরামের কর্মী শরিফুল ইসলাম বলেন, সব নেতা যখনই বিদেশে থাকবেন, তাহলে কর্মসূচি না দিলেও পারতেন। অথবা তারা যখন দেশে থাকবেন, সেই সময় কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করতে পারতেন। এভাবে আন্দোলন করে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা সম্ভব নয়।

বাংলা কলেজ ছাত্রদলের নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, অনেকে মনোয়ন না পেয়ে চেয়ারপারসনের খালেদা জিয়ার কার্যালয় ও  নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাংচুর করেছিল, তালা দিয়েছিল। কিন্তু আজকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই দলীয় কর্মসূচিতে আসেন না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে আর দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, এই দু’জন ফ্রন্টের কর্মকাণ্ডে খুশি নন। এই কারণে তারা ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক ও কর্মসূচিতে এখন আর যান না।  তার জন্য আজকের কর্মসূচিতে তাদের জায়গায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান এসেছেন।

এদিকে কর্মসূচিতে বিএনপি-গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কোনও নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।  এই বিষয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৫ তারিখে আমার মেয়ের বিয়ে। এই কারণে আমি কর্মসূচিতে যেতে পারি নাই। আর অন্যরা কেন যায়নি আমি বলতে পারবো না। 

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির  সদস্য ড. মঈন খান,  বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা রহমান, ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম, রফিকুল ইসলাম পথিক প্রমুখ।