গণশুনানির নামে গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রতারণা: আমির খসরু

বক্তব্য রাখছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীবারবার গণশুনানির নামে গ্যাসের দাম বাড়ানো বড় ধরনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার (১৩ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে বাংলাদেশ জাতীয় দল আয়োজিত ‘তারেক রহমানের ১৩তম কারাবন্দি দিবস ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূল উৎপাটনের ষড়যন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়াতে বারবার গণশুনানি হচ্ছে। গণশুনানির নামে গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর থেকে বড় প্রতারণা আর কী হতে পারে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও প্রকৃত ইনকাম কমে গেছে। তার ওপরে আপনারা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছেন। দরিদ্র, নিম্ন-আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেহেতু তাদের জবাবদিহি নাই, তাই তারা (সরকার) সবকিছু উপেক্ষা করে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের দুই শতাংশ বা কয়েক শতাংশ মানুষের কাছে সব সম্পদ পুঞ্জিভূত। এরা হাজার কোটি, লক্ষ কোটি টাকার মালিক। এদের জন্য সরকারের সব নীতিমালা প্রণয়ন হচ্ছে। এদের মাধ্যমেই সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এটা হচ্ছে নিম্নগামী যাত্রা।’

বিএনপি নেতাদের মধ্যে সরকার সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা করছে, এ অভিযোগ তুলে আমীর খসরু বলেন, ‘বিএনপি এখন সবচেয়ে শক্তিশালী দল। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। এদিক থেকে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা এতদিন হাতে হাত রেখে যেভাবে একতাবদ্ধভাবে চলেছি, সেভাবেই চলতে হবে এবং এই মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হবে।’
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হলে ভালো-মন্দের প্রশ্ন আসে। নির্বাচনই তো হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের এখন নির্বাচনে কোনও আস্থা নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন। রাজনীতিতে এর থেকে লজ্জাকর আর কিছু হতে পারে? বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে প্রতিবাদ করে, মেয়র নির্বাচনে তা দেখেছেন। ডাকসু নির্বাচনে রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়েছে, তা বস্তায় বস্তায় ধরা পড়েছে। ৪২ হাজার ভোট গুনতে রাত তিনটা বেজে গেছে। আর আমাদের লাখ লাখ ভোট (জাতীয় নির্বাচন), সন্ধ্যা ছয়টা-সাতটার মধ্যেই রেজাল্ট শেষ।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন তো হয় নাই। এখানে আবার ভোটের সংখ্যা কী? কে বেশি, কে কম, কার কত ভোট, এসব আলোচনা কেন? ভোট তো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী যা চে‌য়ে‌ছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (গণভবন) যা চেয়েছে, তা-ই হয়েছে। এটা কি আমাদের সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়, এটা কি বায়ান্নোর আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়, এটা কি ঊনসত্তরের বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের বিশ্ববিদ্যালয়, নব্বইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়? এটা এখন শেখ হাসিনা আমলের বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আরও বলেন, ‘নুরকে আনা হয়েছে, এটা নিয়ে এত সম্মান করার কিছু নেই। এটা ছাত্রলীগেরই একটা অংশ। সকালে এক কথা বলে, দুপুরে এক কথা বলে, বিকালে আরেক কথা বলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরাও ছিলাম, যা বলেছি তা-ই করেছি। ৯০-এর আগে ডাকসু নির্বাচনে কারা জিতেছিল? ছাত্রদল। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা সর্বশেষ ডাকসুর পদে ছিলেন, তাদের ১২ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’

ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ছাত্রসমাজকে উঠে দাঁড়াতে হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আমি বলছি না এটা খুব সহজ লড়াই। এ লড়াইয়ের প্রতিটি পদক্ষেপ হবে হিসাবি, প্রতিটি কৌশল হতে হবে সুচিন্তিত। প্রতিটি লড়াই হবে ভয়হীন। তাহলে আপনারা জয়লাভ করতে পারবেন।’

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাছের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মইনুল ইসলাম, আলিম হোসেন, লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন,আব্দুর রাজি প্রমুখ।