খালেদা জিয়ার গৃহকর্মীর বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি: রিজভী

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রুহুল কবির রিজভীবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমের বাবাকে প্রাণনাশের হুমকির দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, ফাতেমা বেগমের বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।’

বুধবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ফাতেমার পরিবারকে তার প্রাপ্য ছাড়াও অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘ফাতেমা আদালতের নির্দেশনায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন। খালেদা জিয়ার হাঁটা-চলাতে অসুবিধা হয়। তার একজন সাহায্যকারী দরকার হয়। সেই বিবেচনায় ফাতেমা তার সঙ্গে আছেন। এটাও এখন সরকারের সহ্য হচ্ছে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকারি হুমকির মুখে নানাজনকে নানা কথা বলতে বাধ্য করা হচ্ছে। আজ (বুধবার) সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, ফাতেমার মা বলেছেন, তিনি মাসে মাসে টাকা পান। তা তিনি নিজেই নিয়ে আসেন। অথচ ফাতেমাকে নিয়ে সরকার জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।’

রিজভী বলেন, ‘আসলে ফাতেমাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই-তিনটি মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে। প্যারোল নিয়ে তাদের মিশন সফল হয়নি। আর এ জন্যই ওই মিডিয়াগুলো সরকারের নির্দেশে এ ধরনের খেলায় মেতেছে। আমরা সতর্ক করতে চাই,  তারা যেন এভাবে মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে মিথ্যা গল্প রচনা বন্ধ করে।’

সৎ সাহস থাকলে তারেক রহমান দেশে ফিরতেন তথ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘তিনি আইনগতভাবে জামিনে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আছেন। এখনও সুস্থ নন, তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে। ন্যায় বিচার করার জন্য বিচারককে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। এটিতেই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, দেশে ন্যায়বিচার নয়, আওয়ামী বিচারই শেষ কথা।’

তথ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘আপনাদের সৎ সাহস থাকলে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করুন, তখন বোঝা যাবে আপনাদের সৎ সাহস কতটুকু। তারেক রহমান বিদেশে থাকলেও দেশের গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুস্থ হলেই দেশে ফিরে আসবেন তিনি।’

মধ্যরাতের নির্বাচনে অন্ধকারের সরকার মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা পরায়ণতা অব্যাহত রেখেছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘সরকারের আচরণে স্পষ্ট হয়েছে যে, জনগণের নেত্রীকে জনগণ ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তার জীবন পণবন্দি করেছে। এখন তার জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে প্যারোলের কথা বলছেন। তার জীবন ও চিকিৎসা নিয়ে এটিও সরকারের রসিকতা।’

সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ তাদের নেতারা খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে অস্থির বলে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘তিনি তো স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়াতেই জামিনে মুক্তি পাবেন, তাহলে ক্ষমতাসীনদের এই প্যারোলের কথা বলাটা তো দুরভিসন্ধিমূলক। সরকারের গভীর ষড়যন্ত্র এবং কুমতলব এখন পরিষ্কার। আপসহীন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চায় জনগণ।’

খালেদা জিয়ার প্যারোলের প্রশ্ন কেন আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন রেখে রিজভী দাবি করেন, ‘তিনি তো নির্দোষ। দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকার সম্পূর্ণ সাজানো মিথ্যা মামলায় তাকে জোর করে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে হত্যার জন্য জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। যে টাকার কথা বলা হচ্ছে সেই টাকার বিষয়ে কোথাও তার কোনও স্বাক্ষর নেই, সেই টাকা এখনও ব্যাংকে জমা আছে।’

তিনি আরও বলেন,  ‘ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা কথা বাদ দিয়ে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। প্যারোলের কথা বলে কোনও ধোঁয়াশা সৃষ্টি করবেন না। কারণ, কোনও ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। তাকে  মুক্তি না দিলে জনগণই রাজপথে নেমে এসে তার মুক্তি আদায় করে নেবে। আর সেদিন এই অবৈধ সরকারের পালানোর পথ থাকবে না।’