৪৫ দিন পর জনসম্মুখে এরশাদ




সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ছেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদদীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও গণমাধ্যমে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবে শনিবার (৪ মে) রাতে শারীরিক দুর্বলতা নিয়েও হঠাৎ জরুরি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনে সংক্ষিপ্ত লিখিত বক্তব্যে তিনি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন।

এরআগে গত ২০ মার্চ নিজের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর গুলশান-১ এর ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন এরশাদ। তখন তাকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর গত ৪৫ দিন আর প্রকাশ্যে আসেননি তিনি। ওই অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছিলেন, ‘আমি অসুস্থ। এটা আমার শেষ কথা, তোমরা জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করো। দলকে আগামীতে ক্ষমতায় আনতে হবে।’

শনিবার বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাত সাড়ে ১০টায় এরশাদকে শোবার ঘর থেকে হুইল চেয়ারে করে আনা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অসুস্থ এরশাদ তার লিখিত বক্তব্যও ঠিকমতো পড়তে পারছিলেন না। তার গলার স্বর সামনে বসেও শুনতে পারছিলেন না সাংবাদিকরা। পরে সাংবাদিকদের অনুরোধে কিছুটা উঁচু স্বরে কথা বলেন তিনি। এসময় পাশ থেকে বলে দিচ্ছিলেন ছোট ভাই জিএম কাদের। পরে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তিনি সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।

অসুস্থ হলেও সংবাদ সম্মেলনে ছোট ভাই জিএম কাদেরের সঙ্গে এরশাদকে কিছুটা রসিকতা করতে দেখা গেছে। ছোট ভাইকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করে মুচকি হেসে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজকে মিষ্টি নেই, এটা কেমন কথা’।

১২তবে নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগা ৯০ বছর বয়সী এরশাদ সাংবাদিকদের সামনে আসতে ইচ্ছুক ছিলেন না। সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে এলাম। সাংবাদিকরা এখন বিশটা, দুইশটা, দুই হাজার প্রশ্ন করবে। কী উত্তর দেবো।’

এসময় পাশ থেকে জিএম কাদের বলেন, ‘কোনও প্রশ্ন করবে না। আপনি শুধু লিখিত বক্তব্যটা পড়বেন। আমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করবেন।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে আটটার দিকে এরশাদের বাসা থেকে বেরিয়ে উত্তরার বাসভবনের দিকে রওনা দেন জিএম কাদের। কিন্তু বাসায় পৌঁছানোর আগেই আবার তার ডাক পড়ে। তখন এরশাদ ঘোষণা দেন রাতেই তিনি জিএম কাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চান। এরপর অনেকটা গোপনীয়তার মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন কাদেরের ঘনিষ্ঠ জাপার যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয়।

অসুস্থতার কারণে গত ৭ এপ্রিল এরশাদ নিজের সম্পতি নিয়ে ট্রাস্ট গঠন। ট্রাস্টে এরশাদ নিজেরসহ পাঁচ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। অন্যরা হলেন- ছেলে এরিক এরশাদ, তার একান্ত সচিব মেজর (অব.) খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তবে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদের এই ট্রাস্টের সদস্য নন।

এরশাদ এতটাই অসুস্থ যে নিজের স্বাক্ষর জাল ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে গত ২৪ এপ্রিল বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে জিএম কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনি (এরশাদ) অসুস্থ। তবে কতটুকু অসুস্থ তা তো বলতে পারবো না। এটা তো মেডিক্যাল বা ডাক্তারদের বিষয়।’

প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেছিলেন এরশাদ। পরের দিন সরিয়ে দেন বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব থেকে। উপনেতা করেন রওশন এরশাদকে। পরে গত ৪ এপ্রিল রংপুরের নেতাদের দাবিতে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করলেও উপনেতার পদ ফিরিয়ে দেননি। ঠিক এক মাসের মাথায় ছোট ভাইকে আবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে দলের দায়িত্ব তুলে দিলেন এরশাদ।

১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করা সেনা শাসক এরশাদ ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই তিনি দলটির চেয়ারম্যান। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে থাকাকালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত মিজানুর রহমান চৌধুরী। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতি থেকে সরে যান তিনি। সে সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।