ঐক্যফ্রন্টসহ তিন ইস্যুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক আজ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ শনিবার (২২ জুন) বৈঠকে বসছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া, ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিদ্যমান সংকটের বিষয়টিও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আনা হবে। স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডন থেকেই বৈঠকে যুক্ত হবেন তারেক রহমান। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।     

জানা গেছে, শনিবার (২২ জুন) বিকালে ৫ টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির মুলতবি বৈঠক বসবে। এই বৈঠকে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকেও অংশ নিতে বলা হয়েছে। এরআগে, গত ১৫ জুন বৈঠক অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকটি মুলতবি রেখে শেষ হয়।  

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘গত শনিবার মুলতবি রেখে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষ হয়। ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মক্তির বিষয়, দলের সাংগঠনিক অবস্থা, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শনিবারের বৈঠকে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আবারও আলোচনা হবে।’ 

জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান থেকে স্থায়ী কমিটির পদোন্নতি সেলিমা রহমান বলেন, ‘আগামীকাল শনিবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নিতে আমাদের বলা হয়েছে।’ 

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই জন সদস্য চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দিতে। এই দুই জন আগে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন তারা বিভিন্ন ফোরামে ঐক্যফ্রন্টের সমলোচনা করেন। তারা মনে করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পেছনে ঐক্যফ্রন্ট অনেকাংশে দায়ী। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেন। এজন্য জোট ভেঙে দিতে তারা বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে শনিবারের বৈঠকের মূল এজেন্ডা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দেওয়া হবে, নাকি রাখা হবে? রাখলেও  কোন প্রক্রিয়ার জোটের কার্যক্রম চলবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া, গত বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের প্রাথমিক কথা হলেও কর্মসূচির ধরন চূড়ান্ত করা হয়নি। এই বৈঠকে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে।

শনিবারের বৈঠকের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ছাত্রদলের চলমান আন্দোলন। সূত্র জানায়, বৈঠকে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে চলামান সংকটের বিষয়টিও তারেক রহমানের নজরে আবারও আনা হতে পারে। কারণ দাবি আদায়ে গত ২০ জুন ২ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্রদল। সংগঠনটির নেতারা কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর আগেই এর সমাধান খুঁজে বের করার পক্ষে বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, ছাত্রদলের ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে দুইটি গ্রুপ বিদ্যমান রয়েছে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে গেলে তখন পুরো দল আরও গভীর সংকটে পড়বে।   

আগামী বৈঠকের আলোচনা বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আলোচনার বিষয়বস্তু তো আগে থেকে নির্ধারিত নয়। বৈঠকে বসলেই আলোচনার বিষয়বস্তু বোঝা যাবে।’

এদিকে, ঐক্যফ্রন্ড ইস্যুতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘খালেদা জিয়া চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থাকুক। সর্বশেষ বিএসএমএইউতে বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির দুই নেতা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি জোটকে আরও শক্তিশালী করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১-২ জনসহ দলের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতা ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দিতে বিভিন্ন রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রোগ্রামে ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য  দেওয়ার  চেষ্টা করা হয়েছিল।’

বিএনপির সূত্র জানায়,  গত ১৫ জুন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের মধ্যে কার সিদ্ধান্তে দলীয় সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন, তা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়।  যার প্রভাব বৈঠকেও পড়ে। এই কারণে বৈঠক মুলতবি রেখে শেষ করা হয়। ফলে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলেও ওই দিন কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।