সরকার পুলিশকে অপব্যবহার করছে: ড. কামাল হোসেন

বক্তব্য রাখছেন ড. কামাল হোসেনসরকার পুলিশকে অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে আমাদের অভিযোগ করতে হচ্ছে— দেশ আজকে কার নিয়ন্ত্রণে চলছে। পুলিশ কার আদেশে মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। জনগণ যদি ক্ষমতার মালিকের ভূমিকায় থাকতো, তাহলে এভাবে নারী নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড হতো না। দেশে এখন সব ধরনের কুকর্ম হচ্ছে। সরকার যেভাবে পুলিশকে অপব্যবহার করছে, এগুলো করে তারা বঙ্গবন্ধুকে দৈনন্দিন অপমান করছেন।’

সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সভার আয়োজন করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

কামাল হোসেন বলেন, ‘খুব লজ্জা লাগে, প্রতিদিন যে ধরনের খবর পত্রিকায় পড়তে হয়। সত্যিকার অর্থে যদি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রাষ্ট্র থাকতো, জনগণ যদি রাষ্ট্রের মালিক থাকতো, এই ধরনের কুকর্ম হতো না দেশে।’

জনগণ সরকারের মিথ্যা প্রচারকে বিশ্বাস করছে না বলে মন্তব্য করে ড. কামাল বলেন, ‘সরকার উন্নয়নের কথা বলে— এ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ। কিন্তু মানুষ তা বিশ্বাস করে না। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ হতে পারে না, যেখানে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড ও সব ধরনের কুকর্ম হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে দৈনন্দিন অপমান করছে বলে মন্তব্য করেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যারা সমবেত হয়েছি, এভাবে বঙ্গবন্ধুকে আর অপমানিত হতে দেখতে পারি না। তাই ঐক্যের রাজনীতির কোনও বিকল্প নেই। একাত্তর সালে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই আমাদের গ্রাম, থানা ও জেলায় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘পরিবার-পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আপনারা কি ডেঙ্গু দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চান? দেশটা আজ জাহান্নামে পরিণত হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ হয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই।’

আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকে দোষারোপের রাজনীতিতে আবদ্ধ রেখেছে দাবি করে রব বলেন, ‘গভীর সত্য কেউ অনুধাবন করতে চায়নি— সেনাবাহিনীতে অসন্তোষ ও ক্যু’র পরিকল্পনা হচ্ছে। সারা বিশ্বে ক্যু পাল্টা ক্যু ঘটছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও আমেরিকার সিআইএ তৎপর। বাতাসে গুঞ্জন। তারপরও কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিরাপত্তা কেন দেওয়া হয়নি?’

রব বলেন, ‘এত জন দিয়ে বিশ্বের কোথাও এ ধরনের ক্যু হয়নি। শুধু ১৫ আগস্টের কথা বলি। সকাল থেকে ট্যাংক বের হচ্ছে। রাতের প্রথম দিকে ট্যাংক রেজিমেন্টসহ শত শত সেনা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুরনো বিমানবন্দরে সমবেত হচ্ছে। সেনাপ্রধান এ বিষয়ে জানেন,কিন্তু কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি। গোয়েন্দা সংস্থার কেউ কোনও রিপোর্ট দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘কোথায় ছিল রক্ষীবাহিনী আর কোথায় সেনাবাহিনী? বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হচ্ছে, আর সরকার জেনেও নীরব থেকেছে। এ দায় কার? আওয়ামী লীগের উচিত দোষারোপের বাইরে এসে এ সত্য উপস্থাপন করা। জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণে বঙ্গবন্ধু হত্যার গভীর সত্য অনুসন্ধান করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নির্মাণ করা উচিত।’

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন— গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান প্রমুখ।