স্বৈরশাসকরা জনগণকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় থাকতে চায়: ড. কামাল হোসেন

ড. কামাল হোসেন (ফাইল ছবি)ক্ষমতায় থাকতে স্বৈরশাসকরা সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্বৈরশাসকদের মূল চেষ্টা থাকে সাম্প্রদায়িকতা ও সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতার মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টি করা। তারা জনগণকে বিভক্ত করে ক্ষমতায় থাকতে চায়।’ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘নির্বাচন কেন্দ্রিক সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে মুক্তিজোট।

জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে স্বৈরশাসনের পতন হয় উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বৈরশাসকরা জনগণের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় না। তবে অতীতে এ ধরনের শাসকরা এসব করে ক্ষমতায় থাকতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সাময়িকভাবে ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের ঐক্যের কারণে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, জনগণের ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই। ঐক্যের ডাক জেলা, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় নিয়ে যেতে হবে আপনাদের। ক্ষমতার মালিক হিসেবে জনগণ যেন নিজের ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য ঐক্যকে সুসংহত করতে হবে। সেজন্যই আমাদের এই ঐক্যের ডাক।’

জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠা হবে উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘সেই ধরনের শাসন ব্যবস্থা জনগণের আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে পারে। আসুন ঐক্যের শপথ নিই, ঐক্য আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’

আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিকে গতিশীল, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আমরা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার পদক্ষেপ অবশ্যই নেবো। আমরা আগামীতে দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবো। সাময়িকভাবে কোনও সরকার বৈধভাবে ক্ষমতায় এলেও তারা ক্ষমতার মালিক নয়, মালিকের প্রতিনিধি। যারা অবৈধভাবে এখন আছে, তারা তো কিছুই না। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন মুক্তিজোটের সমন্বয়ক দিশারী এ আর শিকদারসভায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘অঘোষিতভাবে দেশে এখন কোনও সংবিধান নেই। ক্ষমতাসীনরা যেমন ইচ্ছে সেভাবে দেশ পরিচালনা করছে। স্বৈরশাসকদের দেশ পরিচালনায় কিছু নিয়ম থাকে, কিন্তু এখন দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে। মশা মারা থেকে শুরু করে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডের আসামিদের ধরতে তার নির্দেশ লাগে। তার হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না।’

দেশে উন্নয়নের জুয়াতন্ত্র (ক্যাসিনো), উন্নয়নের সন্ত্রাসতন্ত্র (আবরার হত্যা) চলছে বলে অভিযোগ করে রব বলেন, ‘দেশটা জাহান্নাম বানিয়েছে তারা। এখন বলা হচ্ছে ছাত্র রাজনীতির কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়, দেশবিরোধী চুক্তির বিরোধিতা করার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

আসাদ হত্যার কারণে আইয়ুব খানকে এ দেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে উল্লেখ করে রব বলেন, ‘আবরার হত্যার কারণে আপনাদের ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হবে। সেটার বেশি দেরি নেই।’

ক্ষমতাসীন সরকার দেশের স্বার্থে নয়, অন্যদের স্বার্থে দেশ শাসন করছে বলে অভিযোগ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘এরা শুধু ব্যাংক, শেয়ারবাজার লুট করেনি, মানুষের ভোটাধিকারও হরণ করেছে।’

মুক্তিজোটের জাতীয় সমন্বয়ক এ আর শিকদারের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন– মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না, জেএসডি সহ-সভাপতি তানিয়া রব, মুক্তিজোটের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।