ভ্রান্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও দুর্বল কল্পনার বাজেট: রেজা কিবরিয়া

 

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া

জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পেশকৃত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ভ্রান্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আয় ও অর্থায়নের ভিত্তিতে দুর্বল কল্পনার বাজেটের একটি উদাহরণ বলে মনে করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘চলমান অর্থনৈতিক সংকটে যখন দৃঢ় ও সৃজনশীলতার দাবি ছিল, তখন প্রস্তাবিত ২০২০-২১ সালের বাজেট একেবারে অকল্পনীয়।’

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বাজেট-প্রতিক্রিয়ায় রেজা কিবরিয়া নিজের এই পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করেন। এদিন লিখিতভাবে গণমাধ্যমে তিনি তার প্রতিক্রিয়া পাঠান।

উল্লেখ্য, বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা প্রকাশ করেন, করোনাভাইরাসজনিত মহামারির কারণে চারপাশকে ঘিরে রাখা অমানিশার অন্ধকার একদিন কেটে যাবে।

অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বাজেট সরকারের আর্থিক বিবরণীর চেয়ে বেশি কিছু হওয়া উচিত। এতে সরকারের নীতির ভবিষ্যৎ গন্তব্য উঠে আসা দরকার। এই ক্ষেত্রে এই বাজেট চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। শতাব্দীর ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা প্রবণতায় অর্থনৈতিক নীতি অবশ্যই হওয়া উচিত পুনরুদ্ধারকে কেন্দ্র করে। যখন ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যায়, তখন আর্থিক প্রণোদনা কম কার্যকর হয়। অর্থনীতি পরিচালনার জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনাই হবে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে করোনাভাইরাস মহামারি গুরুতর অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা হাজির করেছে। কয়েক দশকের দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতি এক ঝটকায় হারিয়ে গেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। ছোট উন্মুক্ত অর্থনীতির জন্য বিশ্বায়ন হঠাৎ করে বোঝায় পরিণত হয়েছে। কারণ, বৈশ্বিক জিডিপি এবার ৬ শতাংশের বেশি না হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। যা তুলে ধরা হচ্ছে বাস্তবতা আরও কঠিন। কারণ, সাম্প্রতিক আর্থিক মন্দা বা অর্থনৈতিক চক্রের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক মডেলিং এবার কাজ নাও করতে পারে। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, সবচেয়ে নেতিবাচক পূর্বাভাসও হয়তো অনেক বেশি আশাবাদী হতে পারে।’

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া আরও  বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ‘সাধারণ ছুটির’ মাধ্যমে বিলম্বিত ও উদ্যমহীন পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতি পুরোপুরি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্যের উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থতা এসেছে। ব্যবসা, শিল্প ও বাণিজ্য কার্যত স্থবির হয়ে পড়ায় বেড়েছে বেকারত্ব।’

তার দাবি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ত্রাণ বিতরণ অনাহারের মুখে থাকা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যর্থ হয়েছে।

ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বিদেশে কর্মরত আমাদের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চিত (এদের প্রতি পাঁচ জনের চার জন মধ্যপ্রাচে)। কারণ, তেলের দরপতনে তেল রফতানিকারক দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে প্রভাব। সাম্প্রতিক রেমিটেন্সের চাঙ্গাভাব সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করা উচিত। দেখা উচিত চাকরি হারানো শ্রমিকরা তাদের সঞ্চয় দেশে পাঠিয়েছেন কিনা। গার্মেন্টস রফতানিও হুমকির মুখে পড়ছে, কারণ প্রায় অর্ধেক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে।’