প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বাম জোটের মিছিলে বাধা, পরে তিন দিনের কর্মসূচি

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বাম জোটের মিছিল আটকে দিলো পুলিশপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ। বাধার মুখে শাহবাগ মোড়ে সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে কর্মসূচি। তবে একই দাবিতে আবারও তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয় জোটের পক্ষ থেকে। এই সময়ের মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন জোটের নেতারা।

রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, পাটকল আধুনিকায়ন করা, একাধিকবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিল প্রত্যাহার, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ করা, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত ও বিনামূল্যে সব নাগরিকের করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের দাবিতে মিছিলে আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে মিছিল শুরু করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। মিছিলটি হাইকোর্টে মোড় হয়ে শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে নিরাপত্তার স্বার্থের কথা বলে আটকে দেয় পুলিশ। পরে বাধার মুখে সেখানেই প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাম জোট।

গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ‘পুলিশি বাধার কারণে আজ আমরা এখানে সমাবেশ করছি। কিন্তু আগামীতে তা আর হবে না।’

তবে এ বিষয়ে পুলিশ কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বাম জোটের মিছিল আটকে দিলো পুলিশ

প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাম জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ তিন দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। আগামী ৬ জুলাই গোলটেবিল, পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৪ জুলাই কাওরান বাজার ওয়াশা ভবনের সামনে বিক্ষোভ এবং ২৩ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগসহ অন্যান্য দাবিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘পাটকলের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস জড়িত। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে আদমজী পাটকলের হাজার-হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থান সফল করেছিলেন। এই কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সাবেক মন্ত্রী স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামী আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল। আর এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির দাবিদার সরকার ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দিচ্ছে। আসলে এরা সবাই লুটপাটের সরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৫ হাজার শ্রমিক পরিচালনার জন্য সাড়ে তিন হাজার প্রশাসনের দরকার হয় না। এই মহামারিতে মাথাভারী প্রশাসন ঝেড়ে ফেলার পরামর্শ দিলে সরকার শ্রমিক ছাঁটাই করছে। যাদের লুটপাটের কারণে পাটশিল্পের এই অবস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করছে গণবিরোধী ফ্যাসিবাদী সরকার।’

সমাবেশে জোটের শরিক গণসংসহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়নকারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা একই রকম। দুই জনেই নীতি হচ্ছে করোনার টেস্ট কম, সংক্রমণও কম। এই কারণে শেখ হাসিনা করোনা টেস্টের ফি নির্ধারণ করছে। যাতে গরিব মানুষ টেস্ট করতে না পারে। এই ফ্যাসিবাদী সরকাররে কোনও প্রস্তুতি নেই। তাদের কথা হচ্ছে, যা হওয়ার হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ন্যূনতম চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সরকারি হিসেবে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে বাস্তবে সেটা ৩-৪ গুণ বেশি। বাজেটের ২০ শতাংশ আমরা স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়েছিলাম। আগামী তিন বছরে স্বাস্থ্যখাকে জিডিপির ৫ শতাংশ করার দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু সরকার তা করেনি। তারা লুটপাটের জন্য করোনার এই মহামারিতে বিদ্যুৎ খাতের জন্য বরাদ্দ বাড়িয়েছে।’            

করোনা মহামারিতে যখন ভর্তুকি দিয়ে কারখানা সচল করার দাবি উঠেছে, তখন সরকার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে সাকি বলেন, ‘সরকার ১২ শত কোটি টাকা দিয়ে পাটকল আধুনিকায় করতে পারছে না। আর তারা ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বিদায় করার কথা বলছে। আসলে এই টাকা কোথা থেকে আসবে। তারা শ্রমিকদের সামনে মুলা ঝুলিয়ে বিদায় করবে, পরে শ্রমিকরা সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে।’

সমাবেশ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ ও  পুরো স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর দাবি করেন বাম নেতারা।

মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির আকবর আলী খান, বাসদের হামিদুল হক, বাসদ মার্কসবাদী মানস নন্দী প্রমুখ।