জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘‘শিক্ষা আর স্বাস্থ্য (বিভাগ) দুইটা দখল করছে জামায়াত। ওখানে আর কারও কোনও ঠাঁই নাই… কোনও ঠাঁই নাই।”
শনিবার (৫ জুলাই) বিকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে এক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
‘সংসদ নির্বাচন আটকানোর শক্তি কারও নেই’ হুঁশিয়ারি দিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘নির্বাচন করতে হবে… নির্বাচন আটকানোর শক্তি কারও হাতে নাই যদি আমরা নামি। যারা বলে, ১৬ বছর আমরা কিছু করতে পারি নাই। তাদেরকে বলবো, আমরা এখন ১৬ দিনে তা দেখিয়ে দিতে পারি… আমরা দেখাবো না।”
‘‘একজন ভদ্রলোক মানুষ ওয়াদা করছে সে তার ওয়াদা পূরণ করবে, যথাসময়ে নির্বাচন দেবে— এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা ধৈর্য ধরে রাখছি।”
জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, ‘‘শিক্ষা আর স্বাস্থ্য (বিভাগ) দুইটা দখল করছে জামায়াত। ওখানে আর কারও কোনও ঠাঁই নাই… কোনও ঠাঁই নাই। মাঝে মধ্যে অনেকে বলে, ভারতের দালাল-টালাল। যারা ভারতের দালালি করে তারাই ভারতের দালাল।”
‘‘যারা নির্বাচন চাই না, সংস্কার সংস্কার করে (নির্বাচন) — এটা-সেটা … এগুলো তো ভারতের দালাল। এরাই কিন্তু আওয়ামী লীগের জঘন্য লোকদের তাদের দলের মধ্যে সদস্য বানাইতেছে গোপনে, কিন্তু খবর রাখে না। এই পরাগ মন্ডলরে যে অপহরণ করলো আপনারা জানেন সবাই তার নাম… সে এখন শুনি জামায়াতের নেতা। এখন জামায়াত কী জিনিস আপনারা একটু চিনে রাখেন।”
মাদক ও অস্ত্র মুক্ত কেরানীগঞ্জ গড়ে তুলতে ‘উন্নয়নের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করার কথাও জানান গয়েশ্বর।
কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার শুভাঢ্যা গার্লস স্কুল প্রাঙ্গণে দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ‘যথাসময়ে সংস্কার ও দ্রুত সময়ের নির্বাচনে’র দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এই সমাবেশ অংশ নেয়।
বক্তারা আগামী ঢাকা-৩ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য আহ্বান জানান।
‘যেকোনোভাবে ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে’
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আমি আহ্বান করবো, আগামী দিনে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা পেতে যাচ্ছি, বিনির্মাণ করার আমাদের শপথ আছে, শহীদের রক্তের শপথ আছে, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার শপথ আছে, সারা বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা আছে। সেই বাংলাদেশে ইনশাল্লাহ নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান। আমাদের সকলের নেতা বাংলাদেশের নেতা, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের পাহারাদার হিসেবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এমন একটি উন্নত সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবর্তন পরিণত করবেন সেই রাষ্ট্র গড়ার জন্য আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
‘‘ঐক্যই আমাদের শক্তি, যে ঐক্য থেকে গড়ে উঠেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য… সেই ঐক্যকে আমরা সমুন্নত রাখবো, সেই ঐক্যকে আমরা শক্তিতে পরিণত করি এবং সেই ঐক্যকে সামনে রেখে আমরা নতুন বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বো। সবার আগে আমাদের বাংলাদেশ নীতি বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। আমরা সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশায় সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকবো, সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবো, সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তি, সমস্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাবো।”
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে যেন কোনও বিভক্তি না আসে। গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির কোনও প্রচেষ্টা যেন সফল না হয়।”
‘‘আমরা সেই ঐক্যকে ধরে রেখে, সবাই গণতান্ত্রিকভাবে, প্রয়োজনে আমরা দ্বিমত পোষণ করবো। আমরা সকলে মিলে তারপরে দিন শেষে একটি রাস্তাতে এগিয়ে যাবো… সেই রাস্তা হচ্ছে স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষার রাস্তা, সেই রাস্তা হচ্ছে গণতান্ত্রিক উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের রাস্তা।”
‘১৬ বছর ওদের শান্তি সমাবেশ’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান বলেন, ‘‘অনেকদিন পর একটি সমাবেশে এখানে বক্তৃতা দিতে আসলাম। গত ১৬টা বছর বিএনপির মিটিং করলে তার পাশেই ডাকা হতো আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। আহা রে শান্তি।”
‘‘শান্তি সমাবেশে আসতো কারা? এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, মসজিদের ইমাম সাহেব, মন্দিরের পুরোহিত। না। শান্তি সমাবেশে আসতো এলাকার সবচেয়ে বড় গুন্ডা, এলাকার সবচেয়ে বড় যে মাস্তান— তারাই ওই শান্তি সমাবেশ আসতো। তারা যে পথ দিয়ে আসতো খুটখাট আওয়াজ হতো। সেই আওয়াজ অস্ত্রের আওয়াজ। শেখ হাসিনার আমলে শান্তির মা মারা গিয়েছিলেন.. দাফন করে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।”
বিগত ১৬ বছর বিএনপির নেতা-কর্মীর ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘‘এখন কেউ কেউ বলে নাকি বিএনপি কী করেছে?”
হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার দিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাকিয়ে আছি। এদেশের জনগণ অপক্ষোয় আছে।”
‘‘নির্বাচন নিয়ে যদি কোনও টালবাহানা করা হয়, আবার যদি ঝামেলা করা হয়— আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামবো।”
‘লন্ডন বৈঠকে অনেকের গা জ্বালা’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘‘লন্ডনে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দলের নেতা তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে ওয়ান টু ওয়ান দেড় ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের নেতার সাথে বৈঠক করবেন এটাই স্বাভাবিক।”
‘‘এই বৈঠকে অনেকের গা জ্বলছে। কোনও লাভ নেই। দেশের প্রধান ও সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের সাথে বৈঠক হবে— এটাই জনগণ আশা করেছি এবং সেটাই হয়েছে।”
‘কাচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল মারবেন না’
বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘‘গতকাল দেখলাম জামায়াতের নেতা বলেছেন, যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আরে ভাই, যেনতেনভাবে নির্বাচনের ইতিহাস জামায়াতে ইসলামীর। এই জামায়াতই ’৮৬ সালে স্বৈরাচারের ডাকে নির্বাচনে গেছে। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করেছিল।”
‘‘জামায়াতে ইসলামী বলে, বিএনপি নাকি সারাদেশে দখলবাজি করেছে। আমরা বলি, কাচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল মারবেন না। দেশের মানুষ দেখেছে— ৫ আগস্টের পরে প্রথম ব্যাংক ডাকাতি কারা করেছে? এই জামায়াতে ইসলামী। ৫ আগস্টের পরে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কারা দখল করেছে? এই জামায়াতে ইসলামী। ”
‘নির্বাচন নিয়ে গড়িমসি মেনে নেওয়া হবে না’
কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘‘জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, ভোট চায়। এই নির্বাচন আর দাবি নয়, এটা এখন আমাদের আদায় করে নিতে হবে। এটা নিয়ে গড়িমসি মেনে নেওয়া হবে না।”
কেরানীগঞ্জ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুর সঞ্চালনায় সমাবেশে কেরানীগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।