‘খালেদা জিয়া আসবেন সামনে, ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়াবে বিএনপি’





মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসরকারের নানা চাপ সত্ত্বেও বিএনপি কখনও মাথানত করে বসে থাকেনি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বিএনপি লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি উঠে দাঁড়াবে, সেই ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়াবে এবং জয়ী হবে। খালেদা জিয়া আসবেন সামনে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের সঙ্গে আসবেন, এসে গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠা করবো এবং সব ধরনের সংকট মোকাবিলা করে আমরা জয়ী হবো—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

রবিবার (৫ জুলাই) বিকালে উত্তরার বাসা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সিলেটে সাউথ সুরমা ন্যাশনালিস্ট ফোরামের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব তার দল নিয়ে এসব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিলেট বিএনপির নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘সরকার কী করছে না করছে এটা দেখার দরকার নেই। তারা যা করছে করুক। আপনারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, এসব উদ্যোগ সফল করার জন্য সবাইকে নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করুন। আজকে যে উদ্যোগ আপনারা নিয়েছেন, এটা একটা মহৎ উদ্যোগ। এটাকে নিয়ে কাজ করুন।’
সরকার দুর্নীতি করে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা আছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা আছে। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, এই সরকার দুর্নীতি করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একেবারে ভেঙে দিয়েছে, ভঙ্গুর করে দিয়েছে। এখানে মানুষ কোনও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।’
হাসপাতালগুলোর চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসপাতালে গেলে অক্সিজেনের অভাব, ভেন্টিলেটর বাদই দেন। এমনিতেই লোকে অক্সিজেন পাচ্ছেন না। সাড়ে তিন হাজার টাকার অক্সিজেন এখন চার হাজার, ৩৬ হাজার, ৩৮ হাজার টাকা হয়ে গেছে।’
‘গ্লাভস বলুন, মাস্ক বলুন, স্যানিটাইজার বলুন, সুরক্ষা সামগ্রী বলুন— প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রকৃতপক্ষে সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই, তারা ব্যর্থ হয়ে গেছে এই কাজে।’
তিনি বলেন, ‘খুব কঠিন ছিল না এটাকে (করোনাভাইরাস) নিয়ন্ত্রণ করা। আপনারা দেখেছেন, ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রণ করেছে, কিউবা নিয়ন্ত্রণ করেছে, চীনে এত বড় আক্রমণের পরে তারাও নিয়ন্ত্রণ করেছে, নিউজিল্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেছে। অর্থাৎ সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তারা যদি কাজ করার মতো সত্যিকার অর্থেই একটা ভালো ইচ্ছা থাকে, তাহলে সে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে সেখানে অবশ্যই যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা ইত্যাদি কাজগুলো করা প্রয়োজন, সেই কাজগুলো করা খুব কঠিন ছিল না।’
‘আমি মনে করি আমাদের এখানে যে ভুলগুলো হয়েছে সেই ভুলগুলো সরকার তাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞতা, অদক্ষতা, অযোগ্যতার কারণে আজকে কোভিড সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বারবার ভুল সিদ্ধান্তের ফলে, একবার ঢাকা থেকে চলে যাওয়া আবারও ঢাকায় নিয়ে আসা, আবার ঢাকায় কিছু কিছু অঞ্চল লকডাউন করা। এখন আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি যে, কোরবানির ঈদ আসবে, এই ঈদে আবারও কী… ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণ হবে!’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখছি যে সিলেটে গত কয়েকদিনে সংক্রমণ প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে। ইট হ্যাজ বিকাম এ হটস্পট নাউ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একদিকে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের ওপর অত্যাচার করছে, নির্যাতন করছে। আমাদের কাজ করতে দেয় না। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করে, হত্যা করে। সিলেটের ইলিয়াস আলীকে গুম করে দিয়েছে, কোনও হদিস নেই আজ পর্যন্ত।’
সিলেটে সাউথ সুরমা ন্যাশনালিস্ট ফোরামের উদ্যোগে করোনা আক্রান্ত রোগী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার পর ভার্চুয়ালে এই কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিলেট বিএনপির সাবেক সভাপতি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
সাউথ ন্যাশনালিস্ট ফোরামের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব কামাল হাসান জুয়েলের পরিচালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, সিলেটের সিটি মেয়র বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ এবং লন্ডন থেকে যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালেক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।