পরিবর্তন আসবেই: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশে পরিবর্তন আসবেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘অনেকে এখানে বলেছেন যে হতাশার কোনও জায়গা নেই। পরিবর্তন তো হবেই, পরিবর্তন আসতে হবে। সেই পরিবর্তনের জন্যই কাজ করতে হবে।’

মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) বিএনপি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খানের স্মরণে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

‘জনগণকে ঐক্যবদ্ধ এবং সবার মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে আমাদেরই পরিবর্তন আনতে হবে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। শফিউল বারী বাবু ও আবদুল আউয়াল খানের ত্যাগের মূল্যায়ন তখনই আমরা করতে পারি, যদি সেই সংগ্রাম-লড়াইয়ে সবাই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে এই ভয়ংকর ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির লড়াই গণতন্ত্রের জন্য। এ দেশের মানুষের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই। মানুষের রাষ্ট্রের যে মালিকানা তা ফেরত পাওয়ার লড়াই। এই লড়াইয়ে প্রায় বেশিরভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে। গণতান্ত্রিক অবস্থা তারা ফিরে পেতে চায়, তারা গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে চায়, তারা অধিকার ফিরে পেতে চায়, তারা ভোট দিতে চায়। কিন্তু হচ্ছে না, পারা যাচ্ছে না। কেন, এখানে এমন একটা শক্তি, যে শক্তি পুরোপুরিভাবে সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে দখল করে নিয়ে, ক্ষমতা দখল করে বসে সেই স্বপ্নগুলোকে খান খান করে দিচ্ছে। এজন্য এখন আমাদের ভাবতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে রাজনীতি যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে আমাদের গণতন্ত্রের উত্তরণটা কীভাবে? এটা এত সহজ নয়। ডিক্টেটর থেকে ডেমোক্র্যাসি অথবা ফ্যাসিজম থেকে ডেমোক্র্যাসি- এটা এত সহজে আসে না। এর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, অনেক প্রাইস পে করতে হয়। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যে প্রচুর প্রতিদান দিয়েছে, দিচ্ছে, দিয়ে চলেছে। প্রায় ২০ লাখ আসামি মিথ্যা মামলায়, এক লাখের ওপরে মামলা, আমাদের প্রায় হাজারের ওপর মানুষ গুম হয়ে গেছে, হাজারের উপরে মানুষ খুন হয়ে গেছে এবং কথা বলার কোনও স্বাধীনতা নেই। বিচার পাওয়া যাচ্ছে না এবং অর্থনৈতিক ন্যূনতম যেটুকু স্বাধীনতা ছিল সেটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণকে সংগঠিত করা। সংগঠিত করার মধ্য দিয়েই কিন্তু আমরা জনগণের অধিকারটাকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবো। এছাড়া হবে না।’

শফিউল বারী বাবুর পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার স্ত্রী আগে একটা কাজ করতেন, কিছু দিন হলো সেই কাজটা ছেড়ে দিয়েছেন। আমি সবার কাছে অনুরোধ জানাবো, আপনারা যারা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, সত্যিকার অর্থে ত্যাগী নেতৃত্ব তৈরি করতে চান, তারা দয়া করে এগিয়ে আসবেন এবং এই পরিবারটিকে রক্ষা করার চেষ্টা করবেন। তারা যেন যথাযোগ্য মর্যাদা নিয়ে টিকে থাকতে পারে সেই কাজটুকু যেন করি ভবিষ্যতে।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাবু ও আউয়াল খানকে হারিয়ে আমরা উদীয়মান তরুণ নেতাদের হারালাম। তারা নিজ নিজ এলাকায় যেভাবে কাজ করছিলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত হচ্ছিলেন। নেতা একদিনে তৈরি হয় না। তাদের জীবনটা যদি আলোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে নেতা হতে হলে কত পরীক্ষা, কত ত্যাগ, কত জেল, কত জুলুম, কত মামলা খেয়ে একজন নেতা হতে পারেন। এই দুই উদীয়মান নেতা আমাদের কাছ থেকে চলে যাওয়ায় বিএনপির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে সেটা আমরা এখনও বলতে পারি না।’

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জুলাই শফিউল বারী বাবু ফুসফুসের জটিলতায় ও ২০ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে আবদুল আউয়াল খান মারা যান।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খান খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু।