‘জনবান্ধব’ বনাম ‘ঋণনির্ভর’ বাজেট

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) পৃথক-পৃথক বাজেট-প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এটি করোনা পরবর্তী অর্থনীতি উদ্ধারে জনবান্ধব বাজেট। তবে বিরোধী দলের রাজনীতিকরা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেট ঋণ নির্ভর। এতে সাধারণ মানুষের মুক্তির দিশা নাই। সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার বাজেট।

প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়োপযোগী ও জনকল্যাণমুখী বলে দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যখন মন্দা, সে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সময়োপযোগী বাজেট দিয়েছে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নিম্নবিত্ত মানুষেরা যাতে করে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাজেট ঘোষণা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা যেন উপকৃত হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এতে করে বেকারত্ব কমবে, উদ্যোক্তা বাড়বে।

এ বাজেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে সহায়ক হবে। দেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী একটি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার এ বাজেট জাতির কাছে উপস্থাপন করেছেন। এই বাজেটে দেশের ধনী, গরিব মধ্যবিত্ত সবাই উপকৃত হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, করোনাভাইরাস অভিঘাত থেকে মুক্ত হয়ে উন্নয়নের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখা ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভর্তুকির চাপ সামাল দেওয়াসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। এই বাজেটে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। জনবান্ধব ও উন্নয়ন বান্ধব এই বাজেটকে আমরা স্বাগত জানাই।

গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির  সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকার মানুষের কোভিড পরবর্তী চরম মূল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছে। এতে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

মঈন খান বলেন, ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এই বাজেটে তার কোনও সমাধান নেই।

সিপিবি’র প্রাথমিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধারায় এ বাজেট প্রণীত হয়নি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দেশনা মানা হয়নি। মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের ধারা আমাদের সংবিধান অনুমোদন দেয় না, অথচ ওই ধারায় বাজেট প্রণীত হয়েছে। এ বাজেট আমলা ও লুটেরা নির্ভর। এটা প্রণয়নে জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি।

সিপিবির দুই নেতা বলেন, বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্তের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হবে। এই বাজেট আয় বৈষম্য, সম্পদ বৈষম্য, খাদ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্য বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে কোনও ভূমিকা নেবে না,বরং বৈষম্য বাড়াবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মেগা প্রকল্পসমূহের ধার মেটাতে  ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে;  অথচ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পই এখন অপ্রয়োজনীয়। তিনি আরও বলেন, ঋণনির্ভর এই বিশাল ঘাটতি বাজেটের দায় মেটাতে হবে শেষ পর্যন্ত চরম দুর্দশায় থাকা সাধারণ মানুষকেই। ধার করে ঘি খাওয়ার এই বাজেটে  খাদ্যপণ্যের ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতিতে পুড়ে মরা  কোটি কোটি মানুষের জন্য কোনও স্বস্তির খবর নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে অতি আবশ্যক খাদ্যপণ্যের উৎপাদন  আমদানি, বিপণন, বিক্রয় ও বণ্টনে সরকারের অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ বাজেটে দৃশ্যমান নয়।

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, ঋণনির্ভর এই বিশাল ঘাটতি বাজেটের দায় মেটাতে হবে শেষ পর্যন্ত চরম দুর্দশায় থাকা সাধারণ মানুষকেই। ফলে প্রকৃতপক্ষে এই বাজেট গরীব মারা বাজেট ও একটি পক্ষকেই সুবিধা দেওয়ার সকল আয়োজন করা হয়েছে।

 

তারা  বলেন, বিগত সময়ের মতো আবারও দেশের মানুষের সামনে বৈষম্যের দলিল হিসেবে সামনে এসেছে প্রস্তাবিত বাজেট। আমরা এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করি।

অতীতের মতো এবারের বাজেটও হবে দারিদ্র্য, বৈষম্য, লুটপাটের দলিল ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। তারা বলেন, বাজেটে বৈষম্য নিরসনে সরকারের ইচ্ছা এবং জবাবদিহিতা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন যা বর্তমানে পরিপূর্ণ অনুপস্থিত।

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ঋণনির্ভর- অন্ত:সার শূন্য আখ্যায়িত করে খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ঋণনির্ভর এ বাজেটে সাধারণ জনগণের কোন কল্যাণ হবে না।