শিলংয়ের সানরাইজ গেস্ট হাউজে যেভাবে দিন কাটছে সালাউদ্দিনের

সানরাইজ গেস্ট হাউজবাম দিকের কিডনি ক্রমশ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। হার্টে তো তিনটা স্টেইন আগে থেকেই ছিল, এখন কিডনি স্বাভাবিক সাইজের তুলনায় অন্তত চারগুণ বড় হয়ে গেছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের পরিভাষায় এরই নাম ‘হাইড্রোনেফ্রোসিস গ্রেড ওয়ান’। কিন্তু শিলংয়ের সবচেয়ে আধুনিক হাসপাতালেও এর উপযুক্ত চিকিৎসা নেই।

সিঙ্গাপুর বা ভারতের অন্য কোনও বড় শহরে চিকিৎসার সুযোগ মিলবে কি না, তাও জানা নেই। এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে বেআইনিভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় আদালতে পরবর্তী শুনানির দিন– এসব উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ নিয়েই শিলংয়ে নিঃসঙ্গ দিন কাটছে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদের।

গত বছরের মে মাসে ভারতে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে গলফ লিংক রোডে ‘রহস্যজনকভাবে’ খোঁজ মেলে বিএনপির এই নেতার। এর কিছুদিন আগে থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে।

কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে তিনি শিলংয়ে পৌঁছান সেই রহস্যের জট এখনও খোলেনি। তবে প্রায় মাসখানেক পুলিশি হেফাজতে কাটানো আর জেল ও হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপের পর জুনের গোড়ায় তিনি অবশেষে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। গত আট মাস ধরে শিলংই তার ঠিকানা। কারণ তার জামিনের প্রধান শর্তই হলো- শিলংয়ের বাইরে যাওয়া চলবে না। আর সে কারণেই সালাউদ্দিন আহমেদ আপাতত সেখানেই একটি গেস্ট হাউস ভাড়া করে আছেন। ‘সানরাইজ গেস্ট হাউজ’ নামে শহরের লাবান এলাকার এই অতিথি নিবাসে আপাতত সালাউদ্দিন একাই আছেন। তবে গত কয়েক মাসে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বেশ কয়েকবার এসে কয়েকদিন করে থেকে গেছেন। একবার পরীক্ষার শেষে তার দুই স্কুলপড়ুয়া সন্তানও এসে বাবার সঙ্গে সপ্তাহ দুয়েক কাটিয়ে গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিএনপির অজস্র নেতাকর্মীর আনাগোনা লেগেই আছে, তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে গল্প করেই কেটে যাচ্ছে তার দিন।

সালাউদ্দিনের আইনজীবী তাকে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক বিষয়ে একেবারেই মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন। তারপরও বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে গত সপ্তাহে বেশ খোলাখুলিই কথা বললেন এ বিএনপি নেতা। জানালেন, ভারতের আদালত তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেবে কি দেবে না তা নিয়ে তিনি খুব একটা ভাবছেন না। কিডনির চিকিৎসার ব্যাপারটাই তাকে উদ্বেগে রেখেছে।

‘শিলং তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের সেরা হাসপাতাল নেগ্রিমস যখন আমাকে রিলিজ করেছিল, সেখানকার ডাক্তাররা লিখেছিলেন, আমার কিডনির অসুখের জন্য প্রাইমারি কনসাল্টেশন জরুরি। আমার রোগটা প্রথম ধরেন সিঙ্গাপুরের ডাক্তাররা, ফলে তাদের সঙ্গে এখন আবার পরামর্শ করা দরকার– সেটা সম্ভব না- হলে ভারতেরই অন্য কোনও আধুনিক হাসপাতালে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী যে হবে তা তো বুঝতে পারছি না।’ বেশ অসহায় শোনায় সালাউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠস্বর।

আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার শিলংয়ের আদালতে তার মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা।
সালাউদ্দিন আহমেদ অবশ্য তার আগে ভারতের বিচারবিভাগ তথা সরকারের ওপর ভরসা রাখছেন। তিনি আশা করেন, শেষ পর্যন্ত মানবিক আচরণই পাবেন।

সালাউদ্দিন আহমেদতার আরও একটা বড় ভরসার জায়গা খালেদা জিয়া। শত ব্যস্ততা আর নানা রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি চেয়ারপারসন তার এককালের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র সালাউদ্দিন আহমেদকে ভোলেননি বলেই তিনি খবর পেয়েছেন। এমনকি এ কথাও তার কানে এসেছে যে গত জুন মাসে খালেদা জিয়া যখন ঢাকা সফররত নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখনও কিন্তু বেগম জিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সালাউদ্দিন আহমেদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
ঘটনাচক্রে গত বছরের জুনে যেদিন সালাউদ্দিন আহমেদ জামিন পান, ঠিক তার পরদিনই ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এদিকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক দিল্লি সফরে এসে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তিনি সালাউদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গে কোনও প্রশ্নেরই জবাব দিতে রাজি হননি।
অনিশ্চিত এক পরিস্থিতিতে শিলংয়ে এখন দিন কাটছে সালাউদ্দিন আহমেদের। কোথায় তিনি শেষ পর্যন্ত উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পাবেন, তাকে বাংলাদেশের হাতেই তুলে দেওয়া হবে কি না- সে সব প্রশ্নের জবাব হয়তো মিলবে শিগগিরই।
/এজে/