আজ বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিল: সব ক্ষমতা খালেদার হাতেই ছেড়ে দেবেন কাউন্সিলররা!

বিএনপির পতাকাসাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিলের পর্দা উঠবে মাত্র ৪ ঘণ্টা পরেই। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে এ কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী এ কাউন্সিলেই বিএনপির পরবর্তী সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের কথা থাকলেও বাস্তবে এটি হচ্ছে না। বিগত বছরগুলোর মতো রীতি অনুযায়ী সারা দেশ থেকে আসা সাড়ে তিন হাজারের বেশি কাউন্সিলর এবারও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষমতা খালেদা জিয়ার উপরেই ন্যস্ত করবেন। এজন্য গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনী, সংযোজন-বিয়োজন, স্থায়ী কমিটি, ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচন, উপদেষ্টা কমিটি ও নির্বাহী কমিটি গঠন ক্রমান্বয়ে কাউন্সিলের আরও প্রায় এক-দেড় মাস পর গঠিত হবে। এমনকি মহাসচিব হিসেবে মনোনয়নও কাউন্সিলের পরেই হতে পারে। কাউন্সিলের আগের রাতে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

শুরু সকাল ১০টায়, নেতাকর্মীরা আছেন রাত থেকেই

শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হবে বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিল। তবে সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের অবস্থান শুক্রবার দিবাগত রাত থেকেই। গ্রুপ গ্রুপ আড্ডা চলছে। কাউন্সিল নিয়ে উন্মাদনাও ছড়িয়েছে বেশ। তবে রাত দেড়টার পর বৃষ্টি এসে প্রস্তুতিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটিয়েছে বলেও জানা যায়।
শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিএনপিকর্মী এজমল হোসেন পাইলট সম্মেলনস্থল থেকে জানান, এখনও আছি। সব প্রস্তুতি শেষ। তবে সময় কম হওয়ায় কিছু কাজ অগোছালই আছে। বৃষ্টির বাগড়া তো আছেই।
রাত একটার দিকে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা.সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, আমি নয়া পল্টনের কার্যালয়ে আছি। আমাদের টিম মেডিকেল টিম। আমাদের কাজ ও প্রস্তুতি শেষ। সম্মেলনে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সব কিছুই ব্যবস্থা করেছি।
‘মুক্ত করবই গণতন্ত্র’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এবারের কাউন্সিলের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ।’ এছাড়া বিএনপির অঙ্গ সংগঠন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলের পৃথক ব্যানার করে দিয়েছে বিএনপির কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটি।
সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে দিনব্যাপী বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন করবেন চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিএনপির প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৯ মার্চ শনিবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন থেকে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের উদ্দেশে রওনা হবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তৃতা প্রচার করা হবে।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর দল পুনর্গঠন করে বিএনপি। ২০০৯ সালের জুন মাসে একসঙ্গে ৭২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওই বছর ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল। পরের বছর জানুয়ারিতে গঠন করা হয় ৩৮৬ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি। তিন বছর মেয়াদি কমিটির সময় আড়াই বছর আগেই শেষ হয়েছে। এর আগে দুই দফা কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় কাউন্সিল হয় ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর এর আট বছর পর ১৯৮৯ সালের ৮ ও ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় দলটির তৃতীয় কাউন্সিল। ১৯৯৩ সালের ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপি চতুর্থ কাউন্সিল করে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর হয় পঞ্চম কাউন্সিল।
কাউন্সিল উপ-কমিটি জানিয়েছে,উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর হবে মধ্যাহ্নভোজ। এরপর বেলা ৩টা থেকে শুরু হবে কাউন্সিলরদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। আলোচ্য সূচিতে রয়েছে -শোকপ্রস্তাব উপস্থাপন,দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির রিপোর্ট পেশ, মহাসচিবের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা, দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

শুক্রবার বিকালে বিএনপির নেতৃত্ব, ইতিহাস ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মুদ্রিত ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বইগুলো হল : শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ নায়ক জিয়াউর রহমান, যুগ নায়ক জিয়া, দেশবাসীর প্রতি দেশনেত্রী, বেগম খালেদা জিয়া : বিএনপি ও বাংলাদেশ, তারেক রহমান এবং বাংলাদেশ, শোকার্ত স্বদেশ : আরাফাত রহমান কোকো, রাইট টু লাইফ : এ ফার ক্রাই ইন বাংলাদেশ ২০০৯-২০১৬, ইরোসন অব ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ, এ ন্যাশনাল স্টাটেজি টু কাউন্টার টেররিজম, সাদা চোখে পত্রিকার পাতা থেকে ও উন্নয়ন অর্জনে বিএনপি।

সব ক্ষমতা খালেদার হাতেই ন্যস্ত করবেন কাউন্সিলররা

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বর্তমান মেয়াদের শেষ নীতিনির্ধারণী বৈঠকেই অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় বিএনপির কাউন্সিলের ভাগ্য। কি থাকবে, কি হবে কাউন্সিলে। ওই রাতের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়,ঘোষণাপত্রে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী বক্তব্য।এ বিষয়গুলোতে জাতিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে ঘোষণাপত্রে নতুন প্যারা যোগ করার সিদ্ধান্ত পাকা হয়। পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যানের সংখ্যা ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করা হবে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির মানবৃদ্ধি করার প্রস্তাবও পাশ হয়েছে বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির শেষ বৈঠকে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদকদের সংখ্যা বেড়ে ১০-১১ যেতে পারে।

একই সঙ্গে কাউন্সিলের দিন চেয়াপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমানের নাম ঘোষণা হবে। এছাড়া মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলের নাম খালেদা জিয়া চাইলে কাউন্সিলে ঘোষণা দিতে পারেন। তবে কোনও কোনও নেতা বলছেন, শীর্ষ দুই পদের বাইরে বাকিসব প্রায় এক থেকে দেড় মাসের সময়ে দেওয়া হবে। ক্রমান্বয়ে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ,ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কমিটি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে।

বিএনপি সূত্র বলছে, কাউন্সিলের দ্বিতীয় সেশনে রূদ্ধদ্বার বৈঠকে মূলত গঠনতন্ত্র পাশ হবে। এর বাইরে সংযুক্তি-বিযুক্তি নিয়ে টুকটাক আলোচনার সুযোগ আসতে পারে। তবে মোদ্দাব্যাপার হবে,কাউন্সিলররা সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিগত দিনের রীতি অনুসারে খালেদা জিয়ার হাতে সোপর্দ করবেন।এর বাইরে আগামী দিনে দলীয় সাংগঠনিক তৎপরতা, রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণে কাউন্সিলরদের মতামত শোনা হবে। এর চূড়ান্ত রূপ কি হবে, সেটি পরবর্তীতে স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতোদের সঙ্গে আলাপ করেই ঠিক করবেন খালেদা জিয়া।

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে কাউন্সিলররাও মতামত দেবেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে। কাউন্সিলরদের হাতেই সব ক্ষমতা। তবে তারা চাইলে চেয়ারপারসনের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া ক্ষমতা দিতে পারেন।

সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান বলেন,শীর্ষ দুই পদের বাইরে বাকিগুলো পরেই ঠিক করবেন ম্যাডাম। সেটিই রীতি। তবে খুব প্রয়োজন হলে মহাসচিব পদ ঘোষণা করবেন।

 

এসটিএস/ এমএসএম