বিএনপির কাউন্সিলের ফলাফল শূন্য!


সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০টা, টানা ১২ ঘণ্টা। শনিবার বিএনপির কাউন্সিলে আগত ডেলিগেট, কাউন্সিলর, নেতাকর্মীরা পুরোটা সময়জুড়েই ছিলেন উচ্ছ্বসিত, আন্দোলিত। দ্বিতীয় পর্বে মূল অধিবেশনে কাউন্সিলরা দলের সমালোচনা করতে পেরে অনেকটাই মর্যাদাবান ভাবছিলেন নিজেদের। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে দলের নেতাদের সিদ্ধান্ত, কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে হাততালিও পেয়েছেন অনেক কাউন্সিলর। সকালে প্রথম সেশনের পর বাংলা ট্রিবিউনকে অনেক কাউন্সিলরই জানিয়েছিলেন, তারা তিনটি পদে নির্বাচিতদের দেখতে এসেছেন। বিশেষ করে দলীয় মহাসচিব পদটি দীর্ঘ ৬ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত হওয়ায় এ পদটি ভারমুক্ত হচ্ছে, এমনটিই বিশ্বাস ছিল তাদের।
তবে, টানা ১২ ঘণ্টা পর যখন সমাপনী বক্তব্য দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া মহাসচিব হিসেবে কাউকে পদায়ন করেননি, এরপরই তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে হতাশা। সমাপনী বক্তব্যের পরই কাউন্সিলরদের কেউ-কেউ বলছিলেন, কোনও ফল ছাড়াই শেষ হলো বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল।
কাউন্সিলে মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলের নাম প্রস্তাব করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ, জয়পুরহাটের মোতাহার আলী প্রধান, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ সভাপতি হুমায়ুন কবির নান্নু, বিলকিস শিরীন, রাঙামাটি সদরে বিএনপির নেতা মামুনুর রশীদ। তাদের প্রত্যেকেই প্রস্তাব করেছেন, মহাসচিব পদটি আর কতদিন ঝুলিয়ে রাখা হবে। বিএনপির মতো একটি বড় দল ৬ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলতে পারে না। তাদের প্রত্যেকের বক্তব্যের সময়েই কাউন্সিলে ঠিক-ঠিক বলে রব উঠে। যদিও খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত মহাসচিব পদে কাউকে মনোনয়ন দেননি।
বিষয়টি নিয়ে অনেকটা হতাশাই কাজ করেছে কাউন্সিলরদের মধ্যে। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, তিনটি পদের বিষয়ে আমরা আগে থেকেই জেনেছি। চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব। আজকে কণ্ঠভোটেই মহাসচিব নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু কেন যে ঘোষণা হয়নি জানি না।

 


সিরাজগঞ্জ বেলকুচি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী জামাল উদ্দীন ভুঁইয়াও জানান একই তথ্য। প্রায় ৭০ বছরের কাছাকাছি এই প্রবীণ তৃণমূল নেতা মনে করেন, মির্জা ফখরুলের বাইরে এই মুহূর্তে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। কিন্তু আজকে আমরা  মনে করেছিলাম ঘোষণা আসবে। হয়তো চেয়ারপারসন অন্য কোনও ভাবনা থেকে করেননি। তবে হাউজ প্রস্তুত ছিল।
গুলশান থানা বিএনপির কাউন্সিলর ফারুক হোসেন ভুঁইয়াও একই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন বাংলা ট্রিবিউনকে। অধিবেশন শেষ হওয়ার পর জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি জানি ভাই। ম্যাডাম কেন করেননি জানি না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যই মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিলেট জেলা বিএনপির নেতা আলী আহমেদ বলেন, আমরা ম্যাডামকে ক্ষমতা দিয়েছি। এখন তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। 

আলী আহমদের ধারণা, হয়তো স্থায়ী কমিটি গঠন করে মহাসচিব ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। এক্ষেত্রে আরও সময় লাগতে পারে।  অবশ্যই কেউ কেউ খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০ কে কাউন্সিলের সফলতা হিসেবেও দেখছেন। এরও বিরোধীতা করেছেন অনেকে। বলছেন, ভিশন ২০৩০ পরবর্তী ক্ষমতায় আসার ইশতেহারধর্মী ঘোষণা।

 



কাউন্সিলে আগত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা বিএনপির নতুন নেতৃত্ব দেখতে এসেছেন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নতুন ও প্রবীণদের সম্মিলনে কমিটি দেখতে চান। তারা বলছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে যে কমিটি ঘোষণা করা হবে তাতে যদি প্রকৃত নেতারা জায়গা পান ও তৃণমূল থেকে দলকে যদি আরো বেশি সংগঠিত করা যায় তাহলে দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবারো তারা ক্ষমতায় ফিরবেন।



কাউন্সিলে আসা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা হাসিবুল আলম চৌধুরী ববি বলেন, ‘বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে আগে জিয়া পরিবারকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তা না হলে অন্য কেউ দলে আসলে তা দলের জন্য যেমন ক্ষতিকর হবে তেমনি দল আরও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই নতুন নেতৃত্বেও কাছে প্রত্যাশা থাকবে এখন দলের মধ্যে যে অবস্থা বিরাজ করছে এবং সরকার আমাদের সাথে যে আচরণ করছে তা প্রতিহত করে দলে আবারো প্রাণের সঞ্চার করবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে হলে আগে তৃণমূল পর্যায়কে সংগঠিত করতে হবে। তাই কমিটিতে সবার কথা বিবেচনা কওে তা ঘোষণা করা হবে এবং সে কমিটির মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল আলম রানা বলেন, সারা বাংলাদেশে দলের যতগুলো অঙ্গ সংগঠন আছে সেগুলো যেন কাউন্সিলের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। যদি এটা করা সম্ভব হয় তাহলে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও উৎসবভাব বিরাজ করবে। তাই নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা করি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে যারা সবসময় মাঠে ছিল তাদের যেন অগ্রাধিকার দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

 


কোতোয়ালি বংশাল থানার ৬৮ নং ওয়ার্ডেও মহিলা দলের সভাপতি নীলু আকতার মায়া বলেন, আগামীতে আন্দোলন সংগ্রামে যারা মাঠে থাকবে তারাই যেন কমিটিতে অগ্রাধিকার পায়। তাছাড়া নতুন এই নেতৃত্ব ঘোষণার মাধ্যমে দল আবার পুনরুজ্জীবিত হবে বলেও আশা করি।



মেহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, এই নেতৃত্বের মাধ্যমে দল আবার জেগে উঠবে। বর্তমান সরকার পতনের যে আন্দোলন চলছে সে আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এই নেতৃত্বের দ্বারা সরকার পতনকেও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রত্যাশা থাকবে পূর্বের ভুল ত্রুটি সংশোধন করে ও সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে ও গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রনেতা সোহরাব হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের ছাত্রনেতাদের যেসব অপকর্ম চলছে সেগুলো আগে প্রতিহত করতে হবে। তাই যারা কমিটিতে আসবে তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন দলের আদর্শ অনুসরণ করে কাজ করে ও সকল ষড়যন্ত্র অপকর্ম রোধ করে সামনে এগিয়ে যায়।

 

এসটিএস/এসআর/এমএসএম