ব্যানার-পোস্টারে আত্মপ্রচারণার ঝোঁক কমেনি আ.লীগ নেতাকর্মীদের

ব্যানার

ছবি ব্যবহারের নির্দেশনা না মেনে আত্মপ্রচারণায় ব্যস্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ব্যানার-পোস্টার ও লিফলেটে এখনও আত্মপ্রচারণায় লিপ্ত রয়েছে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। দিবসকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলোকে ঘিরে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তাদের আত্মপ্রচারণা। এ প্রচারণা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কখনও কখনও দলের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকেও ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নেতাকর্মীদের আত্মপ্রচারণা সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার ছবি একেবারেই ছোট আর ওয়ার্ড, থানা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি বড় করে ব্যানার-পোস্টার ও লিফলেটে এসেছে। ঢাকার এমপিদের ছবিও এসব কিছুতে  বড় করে এসেছে। অথচ দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মপ্রচারণা ঠেকাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছবি ব্যবহারের ওপর একটি নির্দেশনা জারি করেন। গত ডিসেম্বরে  দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পোস্টার-ব্যানার, বিলবোর্ড ও লিফলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাড়া কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে ব্যানার-পোস্টার ও লিফলেটে সেই নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে। কার্যত নেতাকর্মীদের আত্মপ্রচারণা ঠেকানো কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে দলের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাপিয়ে সবাই নিজেদের প্রচার-প্রচারণাই বেশি করেছেন।সৈয়দ আশরাফের নির্দেশনায় ছিল, ব্যানার, পোস্টার বা বিলবোর্ডে কোনও ছবি থাকবে না। দেখাগেছে, ব্যানার-পোস্টারসহ এ জাতীয় সব কিছুতেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবির চেয়ে অন্য নেতাকর্মীদের ছবিই ছিল বড় করে। ঢাকার এমপি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ছবি ছিল বড় বড়। 

IMG_4574

বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বেশ কয়েকটি পোস্টার দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েলের সৌজন্যে। এখানে বড় অংশ জুড়ে তার নিজের সংগঠনের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথের ছবি বড় করে ব্যবহার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি উপরের অংশে ছোট করে দেওয়া হয়েছে। অপর একটি পোস্টার স্বেচ্ছা সেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা পলাশ মোল্লা করেছেন। সেখানেও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মোল্লা মো. আবু কাউছার ও পঙ্কজ দেবনাথের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে বড় করে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ছিল ছোট আকারে। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুর রহমান মাহমুদ তানিমের কয়েকটি ব্যানার, পোস্টার দেখা গেছে। এখানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ছোট। মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে আয়নাল আহম্মেদ কিছু ব্যানার পোস্টার করেছেন, এর উপরের অংশে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ছোট করে রয়েছে। আর সেখানে তার নিজের ছবি অনেক বড় করে ছাপানো রয়েছে। এসবগুলো ব্যানার-পোস্টার শোক দিবসের। এগুলো রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে দেখা যায়। তবে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এর সংখ্যা বেশি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগ নেতা  আয়নাল আহম্মেদ বলেন, শোক দিবস উপলক্ষে এসব ব্যানার-পোস্টার আমরা করেছি। এগুলোতে নিজের ছবি ব্যবহার করা দোষের কী দেখছেন আপনারা। স্বেচ্ছাসেবক লীগ পরিচয়ধারী নেতা পলাশ মোল্লা বলেন, এগুলো অনুমতি নিয়েই আমরা করি। এখানে আত্মপ্রচার দেখছেন কেন? আমরা এটাকে দলীয় প্রচার হিসাবে  দেখি।

IMG_4546

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘ছবি ব্যবহারের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সারাদেশে দলীয় প্যাড ব্যবহার করে চিঠি লিখেছেন দায়িত্বশীলদের কাছে। কিন্তু প্রায় প্রত্যেক দিবসকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলোতে এ নির্দেশনা মানা হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এটা যেমন ছোট নেতারা মানছেন না, তেমনি বড় নেতারাও মানেন না। এটা হতাশাজনক।’

জানতে চাইলে প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছবি ব্যবহার করা নিয়ে  দলীয়ভাবে আরও কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এগুলো আসলে নেতাদের অতি উৎসাহী অনুসারীরা করে থাকে। তারা নেতার পাশে ছবি ব্যবহার করে নিজেদের প্রচারণায় আনতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে সবারই সচেতন হওয়া জরুরি।’

IMG_4584

দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সেই নির্দেশনাটি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সিটির মেয়রদেরও  দলের পক্ষ থেকে অবহিত করেন। সেখানেও বলা হয়েছে, নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার-পোস্টার, বিলবোর্ড নগরীতে দেখা গেলে তা উচ্ছেদ করে ফেলতে। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যতিরেকে এ সক্রান্ত কিছু রাখা যাবে না। সিটি করপোরেশন সেই উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি। 

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, শোক দিবস উপলক্ষে বিলবোর্ড, ব্যানার এসবগুলোতে ছোট ছোট নেতাদের আত্মপ্রচারণার উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি থাকলেও সেই সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে খ্যাত-অখ্যাত নেতাকর্মীর ছবি। যা দেখতে বেমানান। এতে করে দলীয় উদ্দেশ্য গৌণ হয়ে যায়।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

এপিএইচ/আপ-এসটি