ভোট বাড়ানোর লক্ষ্যে ঈদে এলাকায় আ.লীগ নেতারা

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও নির্বাচনি এলাকামুখি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতারা। এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যের কথা বললেও মূলত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকার সুযোগ নিতেই এলাকামুখি নেতারা। আওয়ামীলীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদে এলাকার জনগণের সঙ্গে মেশা ও তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে জনবান্ধব হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। ফলে এবার ঈদে ভোট বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এলাকায় থাকবেন নেতারা।

ঈদুল আজহায় আ.লীগ নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় জনবান্ধব হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপির অপরাজনীতির প্রচার করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জনবান্ধব হওয়ার কেন্দ্রীয় নির্দেশনাও রয়েছে। এছাড়া বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছাকাছি যাওয়া ও তাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে আগামী নির্বাচনে দলের ভোট বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন নেতারা।

দলটির নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলোর মতে, ঈদকে কেন্দ্র করেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, হাতে সময় কম। ফলে নিজ নিজ এলাকায় কর্মী ও জনবান্ধব হওয়ার সুযোগ এখন। এই উপলক্ষ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ভুল বোঝাবুঝিও কমিয়ে আনা যাবে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জনগণের প্রতি নতজানু হতে হবে। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি থেকে থাকলে দূর করে ফেলতে হবে। আমি মনে করি, ঈদ উৎসব হলো সেই মোক্ষম সময়। তাই এই ঈদেই এলাকার জনগণ ও কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব থেকে থাকলে তা ঘুচানোর পদক্ষপ নিতে হবে।’

সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা জানান, সর্বশেষ সভায় ঈদকে কেন্দ্র করে নেতারা নিজ নিজ এলাকায় করণীয় বিষয়ে একটি দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায়।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার ঈদ করব এলাকার মানুষের সঙ্গে। এলাকায় থাকব, মানুষের সুখ-দুঃখ শুনব।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে নেতাকর্মী সবাইকে জনগণের দরজায় গিয়ে তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে বলা হয়েছে।  জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, এলাকার নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে দূরত্ব থাকলে তা ঘুচিয়ে যত বেশি নৈকট্য লাভ করা যায় তা নিশ্চিত করতে।’

আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতি ও লুটপাটের যে ভয়াবহতা তা জনগণের সামনে এখন থেকে তুলে ধরা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সবাইকে।’

এ বিষয়ে দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ জানান, এলাকার জনগণের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, সর্বোপরি মানুষের পাশে থাকার জন্যই বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বুধবারই এলাকায় চলে এসেছি। ঈদ করে ঢাকায় ফিরব।’

অন্য যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার একটি নির্দেশনা রয়েছে। আমি নিজেও ঈদ করব আমার এলাকা ফরিদপুরে।’

এলাকায় ঈদ করবেন জানিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকা দিনাজপুর জেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করব। পাশাপাশি বন্যার্ত মানুষের সুখ-দুঃখ শুনব।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘ঈদকে উপলক্ষ করে সবাই গ্রামে যান। সবার সঙ্গে সবার দেখা হয় ঈদে। এটা রাজনীতিকদের জন্যও সুযোগ বটে।’