বিএনপিকে গার্ডিয়ান-আল জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ আ. লীগের

 

logoবিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করে বিএনপি যে বক্তব্য দিয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে যে খালেদা জিয়ার বিশাল সম্পদ, শপিং মল পাওয়া গেছে, এটা তো বিদেশি সংবাদমাধ্যমেই এসেছে। এ বিষয়ে তো আমরা কিছু করিনি।’ তার এই  বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। ক্ষমা না চাইলে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিএনপি নেতাদের এ ধরনের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে খবর ছাপিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান ও আল জাজিরা। আগে এসব গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিএনপি মামলা করুক। তারপর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করবে কিনা চিন্তা করুক। শুক্রবার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলা ট্রিবিউনকে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এসব কথা বলেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে যে খালেদা জিয়ার বিশাল সম্পদ, শপিংমল পাওয়া গেছে, সেই সংবাদ বিদেশ থেকেই এসেছে।’ তবে এই বিষয়ে দেশি গণমাধ্যমে সংবাদ না হওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করি, এখানে তো সংবাদপত্রের অনেক মালিক ও সম্পাদক রয়েছেন, বিভিন্ন চ্যানেলও আছে। কই, এই বিষয়টি নিয়ে তো আপনাদের নিউজ দেওয়ার বিষয়ে কোনও আগ্রহ দেখলাম না। রহস্যটা কী? আপনারা কী ওখানে বিনা পয়সায় শপিং করার কোনও কার্ড পেয়েছেন? না হলে এ সংবাদটাও আপনারা দিতে পারলেন না?’

প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য প্রচার বন্ধ করুন। মানহানিকর মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য ক্ষমা চান। না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। প্রধানমন্ত্রীর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুধু রাজনীতিকে কলুষিত করছে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করবে।’

বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্য বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে দুর্নীতি করেননি, তারা আগে সেটা প্রমাণ করুক। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির অভিযোগ করে খবর ছাপিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান ও আল জাজিরা। আগে এসব গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করুক। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হবে নিশ্চয়ই। রাজ্জাক আরও বলেন, আমরা রাজনীতিবিদ হিসেবে নিশ্চয়ই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবো। যেহেতু দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, সেহেতু অবশ্যই অভিযোগটি আদালতে যাবে, বিচার হবে। এসব কথা বলে পার পাওয়া যাবে না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে তারা আইনের পথে গেলে আমরা খুশি হবো। তারা যে দুর্নীতি করেছেন, তার তথ্য-প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করার সুযোগ পাবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মানহানিকর। এর উত্তর হলো, তারা একের পর এক মানহানিকর কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের দুর্নীতির খবর দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায় এসেছে। প্যারাডাইস পেপারসেও তারেক রহমানের নাম এসেছে।’

খালেদা জিয়ার ‘দুর্নীতি-অপকর্ম’ই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে উল্লেখ  করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্লজ্জ বলেই এ ধরনের কথা বলার ধৃষ্টতা দেখান।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের দুর্নীতি আদালতে প্রমাণিত। তার দুই ছেলে দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘দুর্নীতি না করলে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে আয়েসি জীবন কিভাবে কাটান? খালেদা জিয়া নিজেই কিভাবে আয়েসি জীবন-যাপন করেন?’ ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি নেতারা এসব কথা বলে লাভ নেই। আদালতে বিষয়টা মোকাবিলা করতেই হবে।’

বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’র সঙ্গে তুলনা করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনানুগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে খালেদা জিয়ার পরিবার দুর্নীতিবাজ। তার ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান ইতোমধ্যে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। খালেদা জিয়াও এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। সেই মামলা চলমান। এগুলোই প্রমাণ করে তাদের দুর্নীতির কথা।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার দাবির মধ্য দিয়ে তারা বহুল প্রচলিত ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ প্রবাদটির কথাই আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন।’’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘বিএনপির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিরুদ্ধে মামলা করার সৎ সাহস নেই। কারণ তারা ভালো করেই জানেন, প্রধানমন্ত্রী তথ্যভিত্তিক কথা বলেন, দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন।’ তিনি বলেন, ‘মামলা করলে ভালো হবে। আমরাও আদালতে তথ্য উপস্থাপন করতে পারবো।’

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা: বিএনপি