নির্বাচনি প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত আ. লীগ, আমলে নিচ্ছে না ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’কে

 

আওয়ামী লীগএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’কে আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন আদালতের রায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন। দলটির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক অবস্থা প্রায় তলানীতে। আর এই দলটির সঙ্গে যোগ দিয়েছে নামসর্বস্ব কিছু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি রয়েছেন কিছু দলছুট-জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তি। তাদের নিজেদের মধ্যেই কোনও ঐক্য নেই। ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে মাত্র জোট। এই জোটে দেশ-জাতির কোনও স্বার্থ নেই। এই জোট নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতায় যাওয়ার অন্ধমোহে তারা একত্রিত হয়েছে। এসব কারণে নবগঠিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’  আমলে না নিয়ে নিজেদের ঘর গোছানোর কাজেই মনোযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। নিচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিও। তবে, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’র কার্যক্রম ও গতিবিধি নজরে রাখবে শাসক দল।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মতে, ভোটের বাজারে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তাই তাদের মাথায় রেখে কোনও কর্মসূচি বা জোট বাড়ানোর কোনও উদ্যোগ আওয়ামী লীগ নেবে না। বরং আদর্শিক জোট ১৪ দলের ঐক্য অটুট রেখে নির্বাচনি জোটকে যতটা বড় করা যায়, ততটা করা হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক কোনও শক্তি যদি জোটে যোগ দিতে চায়, তাও বিবেচনা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। এমন কিছু ব্যক্তি মিলে এ ঐক্য করেছেন, যারা সবসময়ই সুবিধাবাদী। চক্রান্তের রাজনীতি করেন। রাজনীতিতে হতাশ হয়ে ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসার সুযোগ খোঁজেন। তারা সমসময় অবৈধ শাসনের সমর্থক। এক-এগারোতেও তারাই অবৈধ সরকারকে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। তাদের কাছ থেকে জনগণ কিছু আশা করে না। তবে, যেহেতু তারা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করেন, তাই তাদের গতিবিধি ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।’

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, নতুন এই জোট কার্যকর কিছু হবে না। কারণ শুরুতেই তারা হোচট খেয়েছে। তাদের স্বার্থগত হিসাব না মেলায় জোটসঙ্গী বিকল্প ধারার সঙ্গে প্রতারণা করে বিএনপির সঙ্গে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ করেছে। যা তাদের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি নৈতিকতাকে ভুলুণ্ঠিত করেছে। কারণ ‘ঐক্যফ্রন্টের’ প্রধান আদর্শ ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনও শক্তির সঙ্গে তারা হাত না মেলানো। বিকল্প ধারা সেই অবস্থানে অটুট থাকলেও জাসদ (একাংশ) ও নাগরিক ঐক্য সে শর্ত ভেঙে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যে গেছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য আছে। তাই কার্যত এ দু’টি দল জামায়াতের সঙ্গী হয়েছে। যে দল বা জোটের আদর্শ, নৈতিকতা ও উদ্দেশ্য শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ, সেসব দল বেশি দূর যেতে পারবে না। জাতীয় রাজনীতিতে  এই জোট প্রভাবও বিস্তার করতে পারবে না। তাই জোটটিকে খুব একটা আমলে নেওয়ার কিছু নেই। তবে, তাদের কার্যক্রম ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যাদের নিজেদেরই ঐক্য নেই, তারা কিসের জাতীয় ঐক্য করবে? বিকল্প ধারা, জাসদ ও নাগরিক ঐক্য মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। এরপর করেছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’; যারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে কাজ করবে না বলে শপথ করেছিল। কিন্তু জাসদ ও নাগরিক ঐক্য সেই শপথ ভেঙে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। যা প্রমাণ করে তারা নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে না। একমাত্র ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। আর তারা এমনই শক্তি যে, নিজেরা দলছুট ও জনবিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে, বিএনপি আদালতের রায়ে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষিত।  সাংগঠনিক ক্ষমতাও শূন্যের কোঠায়। এই দলটির দেওলিয়াপনা এই পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো দলছুট ও জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করেছে। তারা দেশের জন্য যেমন কল্যাণজনক কিছু বয়ে আনবে না, তেমনি রাজনীতিতেও প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে না। তাই আওয়ামী লীগ আদর্শহীন কোনও জোট নিয়ে ভাবার চেয়ে নিজেদের ঐক্য অটুট রাখা ও নির্বাচনি প্রস্তুতির দিকেই  মনোযোগ দিচ্ছে।