ওই চিঠি ছিল প্রতিবাদের, ঐক্যবদ্ধ করার

আজ ১৬ জুলাই। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের এই দিনে ধানমন্ডির নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। গ্রেফতারের আগে দেশবাসীর কাছে খোলা চিঠি লিখে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা।

আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ওই চিঠিই মূলত দেশের মানুষ তথা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে। শেখ হাসিনার আবেগঘন ওই চিঠি আওয়ামী লীগের কাছে ছিল আবেগের। দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আহ্বান। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার একমাত্র মূলমন্ত্র ছিল এটি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সময়ে দলে কিছুটা দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দেয়। শেখ হাসিনার গ্রেফতারের পূর্ব মুহুর্তে দেশবাসীর উদ্দেশ্য লেখা ওই খোলা চিঠি আওয়ামী লীগকে দ্বিধা-বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধ করেছে। সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে। আবেগঘন ওই চিঠি দেশের মানুষকেও ভীষণ নাড়া দিয়েছে।সেই চিঠি

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, গ্রেফতারের পূর্ব মুহুর্তে দেশবাসীর কাছে লেখা শেখ হাসিনার ওই চিঠি ছিল দুরদর্শী রাজনীতির উদাহরণ। তিনি বুঝতে পেরেছেন, দেশবাসী ও নিজের দলকে একটি দিক-নির্দেশনা দিয়ে যেতে হবে। তার অবস্থান যে মানুষের পক্ষে, অন্যায়- অনিয়মের বিপক্ষে এই চিঠিতে সেটিই স্পষ্ট করা হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগকে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে।

অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারক খান বলেন, এ চিঠির লাইনগুলো পড়লে বোঝা যায় রাজনৈতিকভাবে তিনি কতটা বুদ্ধিবৃত্তিক। এর প্রতিটি লাইন মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। মানুষকে ভাবাবেগে ভাসিয়েছে। আওয়ামী লীগকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, শেখ হাসিনার লেখা ওই চিঠিই ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তথা দেশবাসীর সাহস ও শক্তির উৎস। এতে দলের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবনের বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান আজকের প্রধানমন্ত্রী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতির লেখা সেই চিঠিটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:

প্রিয় দেশবাসী, আমার সালাম নেবেন।

আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায়, জানি না।

আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোনও অন্যায় করিনি।

তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ও আপনারা দেশবাসী, আপনাদের ওপর আমার ভরসা!!

আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে আবেদন, কখনো মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি, আপনাদের সঙ্গে আমৃত্যু থাকবো। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন, আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবই!! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু- শেখ হাসিনা।