ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা প্রসঙ্গে আ. লীগ

‘চেয়ারম্যান-মেম্বার লোভনীয় পদ, ব্যবসায়ীদের চেয়েও আয় বেশি’

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার এখন লোভনীয় পদ। ব্যবসার চেয়েও বেশি কামাই। তাই অর্থের লোভে প্রতিযেগিতা বেড়েছে, বেড়েছে সহিংসতা। তবে ১০ কোটি ভোটারের দেশে ৬ হাজার ইউনিয়ন নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা খুব বেশি নয় বলে দাবি করেন নেতারা।

ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার ২ জন মারা গেছেন। নওগাঁ, সাতক্ষীরা, বগুড়া, ভোলা, চট্টগ্রামের মিরসরাই, ঢাকার ধামরাই ও নারায়ণগঞ্জেও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, ফরিদপুরের সালথা ও সিলেটের জালালাবাদেও কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন সবাই চেয়ারম্যান হতে চায়। তারা ভাবে একবার চেয়ারম্যান হলে পরেরবার এমপি হয়ে যাবো। চেয়ারম্যানদের ভালো কামাই। কোনও কোনও চেয়ারম্যান পাঁচ বছরে ১০ কোটি টাকাও কামায়। এটা ব্যবসায়ীরাও পারে না। সহিংসতার পেছনে এটাই মূল কারণ। আমরা চেষ্টা করি বিদ্রোহী প্রার্থী যাতে না থাকে।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সহিংসতার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

ফারুক খান আরও বলেন, প্রতিযোগিতা যখন বাড়ে তখন সহিংসতাও কিছুটা হয়। তবে সহিংসতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশিং যারা করছে, প্রতিটি গ্রামে তাদের খোঁজ রাখা উচিৎ কারা এসব করছে।

এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা কী জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, মনোনয়ন যে পাবে তার বাইরে যদি কেউ বিদ্রোহী হয়, তবে সে আর কখনই মনোনয়ন পাবে না।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বয়স যত বাড়ছে, এলাকায় নেতাও বাড়ছে। আগে বয়স্ক লোকজন চেয়ারম্যান হতে চাইত। এখন যুবকরাও আগ্রহ প্রকাশ করছে। তার মানে এই নয় যে, সহিংসতা চলতে থাকবে। দলীয়ভাবে যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আছে সেটা আমরা নিচ্ছি।

আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিশ্বের কোনও দেশেই তৃণমূলে মারামারি-হানাহানি নিয়ন্ত্রণ করা পুরোপুরি সম্ভব হয় না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চয়ই এসব মোকাবিলা করবেন। দলের পক্ষ থেকে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং জোরদার করেছি।

নাছিম বলেন, ‘এই নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক। এখানে আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে। আবার ঘোমটা পরেও কেউ নির্বাচন করছে। এই সহিংসতাকে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা উচিৎ হবে না।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা, উপজেলা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছি। কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে সেগুলো ওইসব ঘটনা তদন্ত করে যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বঞ্চিত নেতা মনে করছেন তিনিও যোগ্য ছিলেন। গ্রহণযোগ্যতা-জনপ্রিয়তার এসবের মাপকাঠি নেই। একটি অংশ মনে করছে অজনপ্রিয়রা মনোনয়ন পাচ্ছেন, অথচ আমি পাইনি। এতেই শুরু হয় সংঘর্ষ।’