বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো: তথ্যমন্ত্রী

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো। কারণ, বাংলাদেশে গুয়েনতানামো বে’র মতো কারাগার নেই। মা-বাবার কাছ থেকে শিশুদের বছরের পর বছর আলাদা করে রাখা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে ৭ বছরে পুলিশের গুলিতে ৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।’

সোমবার (২৭ জুন) প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউরোপের মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তুলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রাসেলেন্সে রাস্তায় গুলি করে বোমাবাজদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দেশে যখন এই ধরনের এনকাউন্টারে কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়, তখন নানা ধরনের প্রশ্ন তোলা হয়। উনারা (বিএনপি) মানবাধিকারের কথা বলে। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, অনেক দেশের চেয়ে ভালো।’

পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সংবাদ উদ্ধৃতি করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বের সব পত্রপত্রিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রশংসা করছে। কিন্তু বিএনপি অভিনন্দন জানাতে পারেনি। বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, কিন্তু অভিনন্দন জানাননি। পদ্মা সেতু হওয়ায় বিএনপির গায়ে জ্বালা ধরে গেছে। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে কোনও কথা নেই।’ তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলেছে, সে আগে ছাত্রদল করতো।’

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সঙ্গে তুলনার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘স্বর্ণের মূল্যমান ধরে এখন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ করতে হলে ব্যয় হতো ৫৮ হাজার কোটি টাকা। আর পদ্মা সেতু করতে লাগতো ১ লাখ হাজার কোটি টাকা।’

তিনি বলেন, ‘টিআইবি, সিপিডিসহ কয়েকটি সংস্থা এবং বিএনপি সবসময় বলে—বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয়। বাজেট গরিবের কল্যাণে আসবে না। গত ১০-১২ বছর ধরে তারা একই কথা বলে আসছে। কিন্তু প্রতিবছরই বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ। এখন দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে কথা হয় প্রায়ই। আমি মুদ্রাস্ফীতির একটি পরিসংখ্যান এই মহান সংসদে উল্লেখ করতে চাই। ২০২২ সালে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে ৭.৭৯ ভাগ, নেপালে ৭.৮৭ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রে ৮.৬ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯.১ শতাংশ, জার্মানি ৭.৯ শতাংশ, রাশিয়ায় ১৭.১ শতাংশ, তুরস্কে ৭৩.৫ শতাংশ, কেনিয়ায় ৬.৮ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৯.৬ শতাংশ, আর বাংলাদেশে গত ১২ মাসে (মে মাস পর্যন্ত) ৫.৯৯ শতাংশ। আর নিত্যপণ্যের দাম পুরো পৃথিবীতে বেড়েছে করোনা এবং করোনার পর পরই ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে। কয়েকটি পণ্যমূল্যের হিসাব আশপাশের দেশের সঙ্গে তুলনা করে এই মহান সংসদে উপস্থাপন করছি। বাংলাদেশ মোটা চালের মূল্য হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। যেখানে ভারতে হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬৫ রুপি, পাকিস্তানে ৭৭ থেকে ১২৫ রুপি, নেপালে ১০৫ থেকে ১২৫ রুপি, শ্রীলঙ্কায় ২১৬ রুপি। মসুর ডালের দাম বাংলাদেশে ৯৫ বা ১০০ টাকা কেজি। ভারতে সেটি ভারতীয় রুপিতে ৯৭ থেকে ১০২ টাকা, সেটি বাংলাদেশের টাকায় ১১০ টাকার উপরে ১০-১৫ টাকা, পাকিস্তানে ১০২ থেকে ১১২ রুপি, নেপালে ১৭৫ থেকে ১৮০ রুপি, শ্রীলঙ্কায় ১২৬ রুপি। সয়াবিন তেল যেটি নিয়ে অনেক কথা হয়, সেটি বাংলাদেশে আজকের বাজার ১৮০ টাকা। ভারতে ১৮০ থেকে ২৫০ রুপি, পাকিস্তানে ৬০৫ রুপি। নেপালে ৩২০ থেকে ৩৭০ রুপি, শ্রীলঙ্কায় ৮৪০ থেকে ৮৮০ রুপি। যারা দ্রব্যমূল্যের হিসাব দেন, তাদের আশপাশের দেশের দিকে তাকাতে বলি।’