‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘন, তাহলে আমাদের কেন নিষেধাজ্ঞা?’

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন আমরা করবো। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা চাই। ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞার কী হলো। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করব। তুমি বুদ্ধি দেওয়ার কে? তুমি বলার কে?

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাহলে আমাদের কেন নিষেধাজ্ঞা? আবার দালাল লাগাইছেন! ফখরুল ইসলাম নতুন দালাল। ওই দালালে আমাদের ভয় দেখায়। ভয় দেখান শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। আমি বলে যাচ্ছি, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া কোনও নির্বাচন হবে না। তিনি ছাড়া এ দেশে এমন কোনও নেতা নেই যাকে মানুষ বিশ্বাস করে। ষড়যন্ত্র করে ওই নেতাকে বাদ দেবেন?

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দলটির এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের (ছবি: ফোকাস বাংলা)

ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তরের নিষেধাজ্ঞাতে ভয় পেলে বাংলাদেশ কোনোদিনও স্বাধীন হতো না। নিষেধাজ্ঞায় ভয় করলে বঙ্গবন্ধু এই দেশ স্বাধীন করতেন পারতেন না। আজ তাই নিষেধাজ্ঞাকে ভয় করলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, সমৃদ্ধি, সোনালি অর্জন রাখতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, জো বাইডেন বলেছেন গণতন্ত্র হুমকির মুখে। ট্রাম্পকে সামলাতে পারে না, বাংলাদেশকে ধমক দেয়! ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল হিলে ছয়টি প্রাণ ঝরে গেল, এটি কেমন গণতন্ত্র? ২০১৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশে তো কোনও প্রাণ ঝরেনি। আপনাদের দেশে প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এমন একটি দিন নেই, যেদিন যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না। তাহলে আমাদের কেন বলতে আসেন?

লতিফুর মার্কা নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না

বিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক মানি না। ওটা এখন মরা লাশ। ওই লাশ আমাদের কাছে এনে লাভ নেই। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন-লতিফুর রহমানের সেই তত্ত্বাবধায়ক বাংলাদেশে চালু করে একটা অস্বাভাবিক সরকার করবেন, সেটা হবে না। অস্বাভাবিক সরকার মানি না। কেউ আসুক, কেউ বলুক তাতে কিছু যায় আসে না। আজিজ মার্কা নির্বাচন, লতিফুর মার্কা নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না।

৪৮ ঘণ্টা শেষ!

খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবিতে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আলটিমেটাম তো শেষ। গোলাপবাগের গরুর হাটে আন্দোলন শেষ। তারপর কত পদযাত্রা, পশ্চাৎ যাত্রা দেখলাম। তারপরে দেখলাম কত মরণ যাত্রা। শেষে আলটিমেটাম। ৪৮ ঘণ্টা তো চলে গেল, এখন মির্জা ফখরুল সাহেব আপনি কী করবেন? ৪৮ ঘণ্টা শেষ! আন্দোলনের ডাকে জনগণ নেই।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে কাদের বলেন, কোনও ছাড় নেই। হুমকি দিয়ে লাভ নেই। বৃহৎ শক্তির হুমকিকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা পরোয়া করে না। আর আপনারা কী হুমকি দেবেন? ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন হতে দেবেন না, দেখি কে নির্বাচন ঠেকাতে আসে! আশায় আশায় দিন চলে যায়। কী আশায় বাঁধি খেলা ঘর। বেদনার বালুচর। এ খেলাঘর ভেঙে যাবে।

আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের (ছবি: ফোকাস বাংলা)

নাশকতার কালো হাত ভেঙে দেবো

সমাবেশ করতে প্রশাসনের অনুমতি নেবে না বিএনপি, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, আমীর খসরু বলে অনুমতি নেবে না। আইন মানবে না। বিচার মানবে না। অনুমতি না নিয়ে যাবেন কোথায়? জনগণ ধাওয়া দেবে, তখন কর্ণফুলীতে গিয়ে ডুব দেবেন। মানবেন না কী করবেন? কী নিয়ে আসবেন? নাশকতা, আগুন নিয়ে আসবেন? নাশকতার কালো হাত আমরা ভেঙে দেবো।

ক্যাপ্টেন ডাক দেবেন 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, প্রস্তুত আছেন? ক্যাপ্টেন ডাক দেবেন সময়মতো। ৩৬ দিন একাধারে মাঠে থাকতে হবে। মাঠ ছাড়বো না। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবো।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা শহর দখল করবেন? খবর আছে। আমরাও রেডি। এবার মাঠ খালি নাই। কোথা দিয়ে ঢুকবেন, কোথা দিয়ে যাবেন? পালাতে পালাতে বুড়িগঙ্গায় যেতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি প্রমুখ।