বিএনপির অবরোধ অবরোধ কর্মসূচি ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘গতকালও (বৃহস্পতিবার) রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম হয়েছে। মানুষ অবরোধ পালন করছে না, বরং ভয়ের ভাবটাও কেটে যাচ্ছে।’
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে অনলাইন নিউজপোর্টাল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ওনাব) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিরোধী দলে থাকাকালে আওয়ামী লীগ কখনও গাড়িতে আগুন দেয়নি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘দুনিয়ার অন্য কোথাও কেউ হরতাল-অবরোধের নামে গাড়িঘোড়া পোড়ায় না। আমরা যখন বিরোধীদলে ছিলাম কখনও গাড়িঘোড়া পোড়াইনি, বড়জোর রিকশার চাকার বাতাস বের করে দিতাম।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা নিজেরা আত্মগোপনে থেকে কর্মী ও সন্ত্রাসীদের টাকা দিয়ে গাড়ি পোড়ানো, মানুষের ওপর হামলা পরিচালনা করাই তাদের অবরোধ কর্মসূচি। এগুলো কোনও রাজনৈতিক দলের কাজ না, সন্ত্রাসী সংগঠনের কাজ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সমস্ত সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারীকে ধরার জন্য বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি জনগণকেও আহ্বান জানাবো- এরা দেশ, জাতি, সমাজের শত্রু, মানুষের শত্রু, এরা হিংস্র হায়েনার চেয়েও খারাপ। তাই এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।’
‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধির পরও বহিরাগতদের চক্রান্ত’
পোশাকশ্রমিকদের বেতন ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে মাসিক ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার পরও বহিরাগতদের দিয়ে এই খাতে অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে উল্লেখ করে হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘২৮ অক্টোবর দেশে চূড়ান্ত অস্থিরতা তৈরি করতে না পেরে সেই একই মহল এখন গার্মেন্টসে অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যারা শ্রমিক নয়, কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে না, যাদের গাড়িঘোড়া আছে, বড় ব্যাংক ব্যালান্স আছে, ঢাকায় সুন্দর ফ্ল্যাট আছে, তারাই ‘শ্রমিক নেতা’ এবং অস্থিরতার পাঁয়তারার হোতা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এদের কেউ কেউ শ্রমিকদের বেতন ২৫ হাজার টাকা দাবি করেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে সরকারি বা ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরিতে ঢোকে তারাও ২০ হাজার টাকার মতো বেতন পায়। অর্থাৎ বাস্তবতার নিরিখে এই দাবি আসলে গ্রহণযোগ্য নয়।’
গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিকেও তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে, না হলে বেতন কোথা থেকে দেবে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘সে কারণে মালিক, শ্রমিক সব পক্ষের বসার পর প্রধানমন্ত্রী ১২ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রতি বছর ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এরপর বেশিরভাগ শ্রমিকই সন্তুষ্ট হয়ে কাজে ফিরে গেছেন। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় বাইরের লোক গিয়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে শনাক্ত করছে। সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাই, শ্রমিকের বাইরে যারা আছে তাদের নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করার জন্য। কারণ, এই বহিরাগতদের নাশকতারও পরিকল্পনা রয়েছে।’
মূলধারার গণমাধ্যমকে গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান
‘ওনাব’ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় নিবন্ধিত অনলাইনসহ মূলধারার গণমাধ্যমকে গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করে। এ কারণেই আমাদের সরকারের সময় গণমাধ্যমের অভূতপূর্ব বিকাশ বা ‘এক্সপোনেন্সিয়াল গ্রোথ’ হয়েছে।
দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে কিন্তু গণমাধ্যমের কোনও কোনও ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার ঘাটতি আছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘দেশ এবং বিদেশ থেকে পরিচালিত কিছু ভুঁইফোড় অনলাইনই এখন গুজব ছড়ানোর মাধ্যম। পদ্মা সেতু তৈরির সময়, রামু এবং নাসিরনগরের ঘটনাতেও তা-ই দেখা গেছে। মূলধারার গণমাধ্যমের অংশ হিসেবে নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর দায়িত্ব গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা।’
ওনাব সভাপতি মোল্লাহ এম আমজাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি সৌমিত্র দেব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান ও আশরাফুল কবির আসিফ, নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক অপু উকিল, নজরুল ইসলাম মিঠু, অয়ন আহমেদ এদিন মতবিনিময়ে অংশ নেন। তারা ‘অনলাইন বিজ্ঞাপন নীতিমালা’ প্রণয়নের দাবি উত্থাপন করলে মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সেটি সুবিবেচনার আশ্বাস দেন।