১৪ দল এখন কী করবে?

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করার পর দলটির তেমন কোনও কার্যক্রম বা কর্মসূচি এখনও দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটেরও কোনও কার্যক্রম বা কর্মসূচি ছিল না গত চার দিনে। সব মিলিয়ে টানা সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল এক বিপর্যয়কর সময় পার করছে।

এ অবস্থায় জোটটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন শরিক দলগুলোর নেতারা। তারা বলছেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের কোনও কিছুই জানানো হয়নি। তারা এখন কী করবে, সে বিষয়ে একেবারেই ধোঁয়াশা রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা, পরখ করে দেখা এবং এর আলোকে দলীয় করণীয় ঠিক করার কথা বলছেন ১৪ দলের নেতারা। সিদ্ধান্ত নিতে তারা আরও কিছু দিন সময় নিতে চান বলে জানিয়েছেন।

১৪ দলের অন্যতম চারটি দলের শীর্ষ নেতারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের এভাবে পতন হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারেননি তারা। এমনকি পতনের পর আওয়ামী লীগ এভাবে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে, সেটিও ভাবেননি। এমন পরিস্থিতিতে চার দিন পার হয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। সে কারণে জোটের কোনও বিষয়ে মুখ না খুলে আরও সময় নেওয়ার পথে হাঁটছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনই কোনও মন্তব্য করবো না। আমাদের দলের মিটিং আছে দু-এক দিনের মধ্যে। সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। ১৪ দলের নেতারা একই পন্থা অবলম্বন করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। দলীয় বা জোটের কোনও কার্যক্রম বা কর্মসূচি তো দূরের কথা, উল্টো ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বিবৃতিতে দিয়ে এই সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট)।

তবে বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হিসেবে অনতিবিলম্বে দেশে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানায় জাসদ।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। এতে দেশব্যাপী ‘নারকীয় হত্যাকাণ্ড, বাড়ি-ঘরে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনও নেতা বা ১৪ দলের অন্য কোনও শরিক দলকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বাগত জানাতে দেখা যায়নি। এদিকে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের কোনও নেতাকেও বঙ্গভবনে সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলতে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কল করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির মোবাইলে কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৪ দল নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও চিন্তাভাবনা নেই। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখছি আমরা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি ও ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে দেখছি, এর চেয়ে বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা কী করে দেখি। ভালো কাজ করলে আমরা সমর্থন করবো।’

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয়েছে কি না বা শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন রাশেদ খান মেনন, শেখ শহীদুল ইসলাম ও দিলীপ বড়ুয়া।

জোট নেতারা বলছেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ দলগতভাবে সংকটে পড়েছিল। পরে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে দলটি। এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলও সংকটে পড়েছে। এবারও তারা পরিস্থিতি আগের মতো মোকাবিলা করবে, তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। আওয়ামী লীগকে মাইনাস করে কোনও নির্বাচন হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।

গত সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এরপরই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দলটির নেতাকর্মীদের বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।