জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এটা স্বাভাবিক পরিণতি। নীতিহীন রাজনীতির ফলাফল। আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে তো একটা পার্থক্য আছেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা সেকশন আছে যারা এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করতে চান। কিন্তু জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বরাবরই এই জায়গাটি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত হাসানুল হক ইনুর জাসদ আওয়ামী লীগের চরম বিরোধিতা করেছে। রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো জাসদকে মন্ত্রিত্বও দিয়েছে। যদিও তাদের স্ববিরোধিতা অস্বাভাবিক নয়। আমরা মনে করি, তাদের মধ্যে বিরোধিতা শুরু হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।’
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সরকারের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো এবং আওয়ামী লীগও এখন জাসদের ওপর দোষ চাপিয়ে, দূরে সরে যাওয়ার রাস্তা খুঁজবে। এক্ষেত্রে জাসদকেই বলির পাঁঠা বানানো হতে পারে।
দ্বিমত পোষণ করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এটা অপকৌশল। জাতির সমস্যা থেকে দৃষ্টি ফেরানোর অপকৌশল। সৈয়দ আশরাফ সাহেব সত্যি বলেছেন, সন্দেহ নেই। তবে তারা যদি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পরিবেশ তৈরি করে থাকে, তাহলে তারা জাসদের সঙ্গে আছেন কেন। একসঙ্গে বসছেন, খাচ্ছেন কেন? তাহলে তো আশরাফ সাহেবের সমস্যা আছে। তাকে বরং জাতির ক্রান্তিলগ্ন ও গণতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে কথা বলার দরকার ছিল। তিনি অপ্রসঙ্গকে প্রসঙ্গ করেছেন।’
গত সোমবার ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘জাসদ এখন আওয়ামী লীগের লেজুড়বৃত্তি করে।’ তিনি জাসদের ধারক-বাহকদের শতভাগ ভণ্ড বলে উল্লেখ করেন। সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এদের একজনকে আবার মন্ত্রিত্বও দেওয়া হয়েছে, যার প্রায়শ্চিত্ত আওয়ামী লীগকে আজীবন করতে হবে।’
পরদিন মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সাংসদ ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর জাসদ গণবাহিনী গঠন করে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা না করলে দেশে দুর্দিন আসতো না। বঙ্গবন্ধুর মতো এতবড় জাতীয় নেতাকে আমরা হারাতাম না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হারুন আল রশীদ বলেন, ‘এগুলো খামোখা বিতর্ক। জাসদকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে এই ধরনের কথা বলে সরকার তামাশা করছে জনগণের সঙ্গে।’
হঠাৎ করেই সরকারজোটে এই দ্বন্দ্ব-বিরোধের কারণ বলতে গিয়ে উদ্ধৃত হতে অস্বীকার করেন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের একজন নেতা। তিনি বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে জাসদকে নিয়ে নতুন রাজনীতি করতে চায় আওয়ামী লীগ। দেশে এখন নানা রকম সমস্যা রেখে এই আলোচনা বিভ্রান্তিজনক।’
২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ- এর মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া মনে করেন, সৈয়দ আশরাফ ইতিহাসের নির্মম সত্য তুলে ধরেছেন। এই উপলব্ধি যদি সত্যি হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য কল্যাণকর হবে।
- আশরাফের মুখ ‘বন্ধ’ করুন: প্রধানমন্ত্রীকে জাসদ
- গণবাহিনী আ.লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা না করলে দেশে দুর্দিন আসতো না: ফিরোজ রশীদ
এসটিএস/এজে