ইতোমধ্যে বিএনপির মূল দলে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের অবস্থান অনেকটাই শক্ত। স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কমিটিসহ নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন সংগঠনের সাবেক প্রভাবশালী নেতারা।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটির সদস্য। ১৯৮৫ ও ১৯৮৬ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু, বর্তমানে তিনি অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান এবং দলের ভোকালে পরিণত হয়েছেন।১৯৯৬-এর শেষের দিকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী সভাপতি হয়ে ৯৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলেন। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাবিবুন নবী খান সোহেল। পরে তিনিও সভাপতি হন, পদে ছিলেন ২০০০ সাল পর্যন্ত। গত বছর বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হন সোহেল। গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ)-এর সভাপতির দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বর্তমানে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক হিসেবে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। ১৯৯২ সালের ১৬ মে প্রথমবারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সভাপতি হন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দফতরের দায়িত্বে আছেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন ফজলুল হক, তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। ছাত্রদল নেতা ও ডাকসু নেতা খায়রুল কবির খোকন যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে সক্রিয় আছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতির দীর্ঘস্থায়ী টেকসই ও আগামী দিনের জাতীয়তাবাদী ঘরানার রাজনীতি বিস্তারের জন্য ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মূল দলে ভূমিকা রাখা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত ছাত্রদলের পর মূল দলে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী দিনে জিয়াউর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে জনগণের কাছে তুলে ধরাই হবে প্রধান কাজ। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যারা জীবনের শুরু থেকে বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদল করার মধ্য দিয়ে, তারা এখন দলের বিভিন্ন পর্যায়ে অবস্থান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এটি বিএনপির রাজনীতির জন্য শুভ লক্ষণ।’
১৮ এপ্রিল রাতে কমিটি ঘোষণার পরদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আন্দোলনে ঢাকা মহানগর সফল হবে। কমিটিতে পরীক্ষিত সৈনিকদের স্থান দেওয়া হয়েছে। কমিটির বেশিরভাগ পদেই তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ সফল হবে বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, ‘অতীতে ছাত্রদলের অনেকেই মূল দল বিএনপিতে ভূমিকা রাখলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। হাবিবুন নবী সোহেলকে ঢাকা মহানগরের সভাপতি করায় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার পারদ অনেকটাই বেশি। ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে সোহেলসহ তৃণমূল থেকে উঠে আসা কাইয়ূম কমিশনারকে উত্তরের সভাপতি করায় তৃণমূলেও হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে গেছে। বিএনপির নেতৃত্ব চাইছে, যেকোনও মূল্যে বিগত আন্দোলনে বিফল ঢাকা মহানগরকে আগামী দিনের আন্দোলনে চাঙ্গা করা।’
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘ছাত্রদলের সাবেক নেতারা বিএনপির হাল ধরে রাখলেই জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করা সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা, আন্দোলনে এবার ঢাকা নেতৃত্ব দেবে।’
ছাত্রদলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সরদার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সোনালি ফসল বিভিন্ন সময়ের ছাত্রনেতা, যারা সময়ের পরিক্রমায় জাতীয়তাবাদী দলের কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিএনপি আজও জনগণের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে আছে।’
সংগঠনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়কসহ সম্পাদক ডালিয়া রহমান মনে করেন, ‘ছাত্রদল করে মূল দলে ভূমিকা রাখার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। জাতীয় রাজনীতির জন্য ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাবিবুন নবী খান সোহেল ঢাকা মহানগরের নেতৃত্বে আসায় ছাত্রদলের প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি।’
/এমএনএইচ/