বদলে গেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়!

 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়হঠাৎ করেই নতুন চেহারায় সেজেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। রাজধানীর নয়া পল্টনে স্থাপিত এই কার্যালয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ছয়তলা পর্যন্ত সিঁড়ি সাজানো হয়েছে নতুনভাবে। দেয়ালে লেগেছে নতুন রঙ। রয়েছে পোস্টার না লাগানোর নির্দেশনাও। অনেকটাই চমকে দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে নতুন একটি পাঠাগারও। জিয়া স্মৃতি পাঠাগারে দেওয়া হয়েছে ধূমপান না করার নির্দেশনা। এই জানুয়ারি মাসেই অনলাইনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাঠাগারটি উদ্বোধন করবেন।

জিয়া স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জহির দীপ্তি জানান, ‘আমরা আশা করি দলের চেয়ারপারসন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত পাঠাগার উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে আমরা এর ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছি।’

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলা পরিচ্ছন্ন। নেই আগের মতো দেয়ালজুড়ে পোস্টার। সিঁড়ি শুরু হওয়ার আগেই ডান দিকে চোখে পড়বে, কাঠের লেয়ার দিয়ে বাঁধানো বোর্ড সাঁটানো; এতে রয়েছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা। এর ডানে রয়েছে নিয়মিত বই পড়তে খালেদা জিয়ার আহ্বান জানানো বাঁধাই বোর্ড। নিচতলা থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত এতদিন পোস্টারের ওপর পোস্টার সাঁটানো থাকলেও এখন পরিচ্ছন্ন-ঝকঝকে। এরপর দ্বিতীয় তলা থেকে বিএনপির তিন প্রজন্মের নেতৃত্বের পোস্টার। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত বাঁধাই বোর্ড।

ষষ্ঠতলায় স্থাপন করা হয়েছে জিয়া স্মৃতি পাঠাগার। প্রবেশমুখে সাঁটানো হয়েছে জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী সংবলিত কাঁচের বোর্ড। কালো অক্ষরে বোর্ডের ওপরে রয়েছে জিয়াউর রহমানের ছবি।

চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত আগ্রহেই পাঠাগার করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের শুরু থেকে তত্ত্বাবধানে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ১৪ জানুয়ারি রাতে দলীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠকেও পাঠাগারের বিষয়টি উঠে আসে। ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদলনেতা রাজিব আহসানকেও খালেদা জিয়া পাঠাগারে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বই পড়তে আগ্রহী করে তুলতে ছাত্রদল সভাপতিকে পরামর্শ দেন তিনি।

নয়া পল্টন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভেতরে এখন পোস্টারমুক্ত পরিবেশ হলেও বাইরের দিকে বড় বড় দীর্ঘ ব্যানার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এছাড়া চার, পাঁচ তলায় বিভিন্ন সংগঠনের বাথরুমগুলোও নোংরা থাকে। এগুলো ঠিক না করলে ভেতরের পরিবেশ শিগগিরই নষ্ট হবে।বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাঠাগার

বিএনপির একজন নেতা জানান, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ছাত্রদলের পাঠচক্র থাকলেও এখন তা নেই। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বই পড়ার কোনও আগ্রহও নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি কোনও পাঠচক্রের আয়োজন করেনি। 

জাসাস সহ-সভাপতি শায়রুল কবির খান বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের মৌলিক তিনটি কাজ। ১৯ দফার শেষ দফা জাতীয় ঐক্য। বিএনপি ও দলটির রাজনৈতিক দর্শন, সুষম বণ্টনের ভিত্তিতে সামাজিক ন্যায়বিচার। ফলে তার এই শিক্ষাকে রপ্ত করতে তাকে নিয়ে পড়া ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।’

পাঠাগারসূত্রে জানা গেছে, জিয়া স্মৃতি পাঠাগারে ১৮০০ বই ইতোমধ্যেই চারটি আলমারিতে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাহিত্য, জীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ রয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়

সাংস্কৃতিককর্মী শায়রুল কবির খান জানান, গত কয়েক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি হয়েছে। পাঠাগারে কম্পিউটার, টেবিলসহ নানা উপকরণ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাজনীতিচর্চার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে পড়া। এক্ষেত্রে পাঠাগার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জিয়া স্মৃতি পাঠাগারে বই পড়ার সুযোগ থাকবে।’ নিজেদের রাজনৈতিক উৎকর্ষ  সাধনের লক্ষ্যে নেতাকর্মীরা পাঠাগারে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে,  শুক্রবার জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।