বুধবার (৭ মার্চ) বিকালে একঘণ্টা ১০ মিনিট তার সঙ্গে বিএনপির আট জন নেতার সাক্ষাতের পর বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতার সঙ্গে। প্রত্যেকের ভাষ্য, ‘খালেদা জিয়াকে দুশ্চিন্তামুক্ত দেখা গেছে। পাশাপাশি বিএনপির চলমান আন্দোলন ও দলের কার্যক্রম সম্পর্কেও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন তিনি।’
একঘণ্টা ১০ মিনিটের সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ হলে দলের ঐক্য ধরে রেখে পরিচালনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। মূলত একমাস কারাগারে থাকায় দলের আগামী দিনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করতেই এ সাক্ষাৎপর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে বুধবার বিকালে। এদিন বিকাল সোয়া ৩টায় কারাগারে প্রবেশ করে বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে বের হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের পূর্বনির্ধারিত কর্মকৌশল নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে। আগেই দলের চেয়ারপারসন নির্বাহী কমিটির সভা ও স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। আজও শান্তিপূর্ণভাবে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য চলাকালীন আমাদের বৈঠক হওয়ায় আমরা তা শুনিনি। খালেদা জিয়া আমাদের বলেছেন, দেশবাসীকে সালাম দেবেন। আমি কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় কী মুভমেন্ট হচ্ছে না হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। আপনারা যা করছেন, ঠিক করছেন। আরও শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা কর্মসূচি চালিয়ে যান।’
বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, খালেদা জিয়ার কারাবাস আরও দীর্ঘ হবে। এ কারণেই দলীয় কৌশলগুলো ঝালাই করে নিয়েছে দলটি। যদিও তাদের অনেক নেতা আশা করছেন, হাইকোর্টের আদেশে দ্রুতই জামিন পাবেন নেত্রী।
বুধবারের সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সরকার বিভিন্ন কারচুপির মধ্য দিয়ে তার কারাবাসকে দীর্ঘ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সবকিছু দূরীভূত হবে বলে বিশ্বাস করি আমরা। আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমাদের সংগ্রাম চলছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের চেয়ারপারসন কারান্তরীণ হওয়ার পর থেকে আমরা যৌথ প্রচেষ্টায় আন্দোলন পরিচালনা করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু পরিচালনা করছি।’
বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, মূলত কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে আট জন নেতার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকটি ভিন্ন তাৎপর্য লাভ করেছে। এই নেতার ভাষ্যে ওই বিষয়গুলো হলো, ‘আমাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, ম্যাডামের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর, আমাদের কার্যক্রম ও এর সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ।’
এ বিষয়ে বিএনপির রাজনীতির ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথায়, ‘আজকের বৈঠকে রাজনৈতিক তাৎপর্যের কিছু নেই। খালেদা জিয়া তো অনেকদিন থাকলেন। আশা করি, রবিবার (১১ মার্চ) তিনি জামিন পেয়ে যাবেন।’
তবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, নেতারা একসঙ্গে পা ফেললে তা রাজনৈতিক তাৎপর্য পায়। বুধবারও সেটি ঘটেছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর শঙ্কা আছে। কারণ ম্যাডামের বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে।’
বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বললেন, ‘সাক্ষাৎকালে ম্যাডামকে হাসিখুশি দেখা গেছে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সাক্ষাৎই তো করা হয়েছে তার অবস্থা দেখা ও আমাদের অবস্থা জানানোর জন্য। মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে তিনি ভালো আছেন। বিশেষ করে মানসিকভাবে অত্যন্ত উচ্চ অবস্থায় আছেন।’
কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার কাছে একটি শক্তিশালী পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব যাওয়ার কথা জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তবে এ নিয়ে বিএনপি নেতারা নিরব। তবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘না, এ ধরনের কোনও কিছু আমাদের বলেননি। আমরা জানি না।’
জমির উদ্দিন সরকারও এ ধরনের কোনও প্রস্তাব গেছে কিনা তা জানেন না। তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের এমন কিছু বলেননি।’
সাক্ষাতে অংশ নেওয়া আরেকটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের দু’জনকে সান্ত্বনা দেন।
বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, চলমান পরিস্থিতি ও খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই কর্মসূচি প্রণয়ন ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মসূচির বিষয়ে ম্যাডাম সন্তুষ্ট। তার কাছে চারটি পত্রিকা যায় তো, তিনি পড়েন। তিনি দল নিয়ে কোনও অভিযোগ দেননি। সাধারণত যেটা হয়, তিনি পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন।’
ওই সদস্য এও বলেন, ‘খালেদা জিয়া কথা বলেছেন, আমরা শুনেছি। যেটার উত্তর দেওয়ার সেটা দিয়েছি। আমরা নিজেদের সম্পর্কেও অনুসন্ধান করেছি।’
সাক্ষাৎকালে একটি কক্ষকে ব্যবহার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সাক্ষাৎ করে আসা একজন নেতার ভাষ্য, সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত কক্ষটি সাজানো গোছানো ছিল। বসার জন্য দেওয়া হয়েছিল চেয়ার।
ওই নেতা আরও জানান, সাক্ষাৎকালে খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা ছিলেন। তবে তাদের কাউকেই কিছু খাওয়ানো হয়নি। সাক্ষাতে সব নেতা শুধু কথা বলেছেন।