ওপরে উৎসব, ভেতরে সিন্ডিকেট: কতটা নতুনত্ব আসবে ছাত্রদলে?

ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী নেতা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারামেয়াদোত্তীর্ণ সর্বশেষ কমিটি বিলুপ্তির পর দীর্ঘ ২৮ বছরের মাথায় সরাসরি কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করার সুযোগ পেলো ছাত্রদল। আর গুরুত্বপূর্ণ এই সহযোগী সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সামনে এ সুযোগ তৈরি করতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের চোখেও নতুন স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটির সাংগঠনিক শক্তি যখন ক্ষীয়মান, সেখানে ছাত্রদলকে দিয়ে হাইকমান্ড দেখছে নতুন সম্ভাবনা। তবে, শীর্ষ নেতৃত্বের স্বপ্ন গুড়েবালি হবে কিনা, সেই আশঙ্কাও রয়েছে ভেতরে ভেতরে। শনিবার (১৭ আগস্ট) ও রবিবার মনোনয়ন ফরম তোলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের আগ্রহীদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ-উৎসব দেখা গেলেও ভেতরে সিন্ডিকেটেরও আশঙ্কা করছেন সংগঠনটির নেতারা।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ছাত্রদলের সর্বশেষ রাজিব-আকরাম কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর। এরপর এ বছরের ৩ জুন মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। তবে, এর আগে সংগঠনটির সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ১৯৯২ সালে। তখন নানা বিতর্কিত কাজ করায় তিন মাস পরই ওই কমিটি ভেঙে দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দলের সর্বস্তরে সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

এ সিদ্ধান্তের আলোকে ছাত্রদলের ‘বয়স্ক’ নেতাদের প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মুখেও সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব কাউন্সিলের মাধ্যমে বাছাই করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে হাইকমান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার ও রবিবার সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১১০ জন পদপ্রত্যাশী।

শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যাশায় বাধা সিন্ডিকেট

ছাত্রদলের আগ্রহী ও ভোটার পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ইতিবাচক হলেও খোদ দলেরই দুটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করছে। একটি ইলিয়াস আলী গ্রুপ। এই সিন্ডিকেটে বিএনপির কেন্দ্রীয় অন্তত ১০-১২ জন নেতা যুক্ত আছেন। যাদের প্রায় প্রত্যেকেই ছাত্রদলের সাবেক শীর্ষ দায়িত্বশীল ছিলেন। এই গ্রুপের শীর্ষ এক নেতা বাদে বাকিরা ছাত্রদলের সার্চ কমিটিতে সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিয়াস আলী গ্রুপের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্তত আট জন নেতা রয়েছেন। এই গ্রুপটি এখন দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছে। গ্রুপটির নরসিংদী এলাকার নেতারা চাইছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল মেহেদী তালুকদারকে সভাপতি করতে। যদিও তার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ, এমন দাবি করেছেন ছাত্রদলের সদ্য সাবেক কমিটির কয়েকজন নেতা। তাদের দাবি, ইতোমধ্যে মেহেদী বিবাহিত, সন্তাদের বাবা হওয়ার তথ্য বিএনপি নেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই গ্রুপে ডামি প্রার্থীও ঠিক করা হয়েছে একজনকে। মেহেদী বাদ পড়লে তাকে সামনে আনা হবে। এ কারণে এই গ্রুপের দ্বিতীয় পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান। এ গ্রুপটির নেতৃত্বে আছেন তারেক রহমানের সাবেক এক কর্মকর্তা, যিনি সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে খুলনার একটি আসন থেকে প্রার্থিতা করেছেন।’

পদপ্রত্যাশীর পক্ষে ছাত্রদলের মিছিলএ বিষয়ে জানতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে ইলিয়াস আলী বলয়ের অন্যতম নেতা, ঢাকা মহানগর (বিএনপি) দক্ষিণের সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘আমি তো এ ধরনের কোনও সম্ভাবনা দেখছি না। এখন পর্যন্ত যা দেখছি, প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলছেন, দীর্ঘদিন পর কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, এটাই তো সত্যি। ডার্কসাইট এখনও চোখে পড়েনি। আশা করি পড়বেও না।’

এদিকে, ছাত্রদলের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সক্রিয় দ্বিতীয় ও অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা। তবে দলীয়ভাবে তার কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় এ গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুবদলের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। এ গ্রুপের পক্ষ থেকে সভাপতি হিসেবে সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় ক‌মি‌টির সাবেক বৃত্তি ও ছাত্র কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম ফকির লিঙ্কনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এছাড়া, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নেতার নাম এসেছে। বিএনপি নেতাদের দুই গ্রুপের এ সিন্ডিকেট-প্রভাবের কারণে সাধারণ প্রার্থীদের মধ্যে ভীতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে অঞ্চলভিত্তিক ভোটারদের বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন অন্তত পাঁচজন প্রার্থী।

সিন্ডিকেট সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আমানউল্লাহ আমান বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘পছন্দ বা বাছাইয়ের সুযোগ না রাখার জন্যই সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিল করে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এখানে কোনও প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে কাজ করার সুযোগ নেই। আমরা যারা ছাত্রদলের কাউন্সিলের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ ধরনের কোনও বিষয় আমাদের কারও মধ্যে নেই। প্রতিটি জেলা থেকে ৫ জন করে ভোট দেবেন। সেখানে পক্ষপাত তৈরি করা সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে সভাপতি প্রার্থী মামুন খান বলেন, ‘‘কাউন্সিলের বিষয়টি তো বহু দিন পর এসেছে। প্রথম যখন দুটো পদে ভোটের কথা ওঠে, তখন বিভিন্ন মহল থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ যাওয়ার পর ‘সুপার ফাইভ’কে ভোটার হিসেবে যুক্ত করা হয়। যেন কেউ ম্যানিপুলেট করতে না পারে। সে কারণে যারা চিন্তা করছে, সেটা সিন্ডিকেট বলুন বা যাই বলুন, ঠিকঠিক সেরকম হবে, তা তাদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।’’

ঢাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থিতা করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হচ্ছে। ভোটাররা অবশ্যই কোনও সিন্ডিকেট বা যেকোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবেন। দলের এ দুর্দিনে যোগ্যদের ভোট দেবেন। এমনটাই আশা করি।’

জানতে চাইলে ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত আপিল কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক সচেতনতা দরকার। একই সঙ্গে দরকার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয়গুলোকে আরও স্পষ্ট করা। আর সিন্ডিকেট হিসেবে যেটা আসছে, সেটা সুবিধাবাদিতার অংশ। কিন্তু কেউ যদি কোনও নেতৃত্ব পছন্দ করে, তা খারাপ কিছু না। কিন্তু সেটাকে স্বাভাবিক পথে নিয়ে আসা জরুরি। সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে সমর্থন নিয়ে তাদের ভাবনাকে সম্পৃক্ত করা হয়, তাহলে কিন্তু বিতর্ক সৃষ্টি করে না। যদি এমন কিছু ঘটে, যা সংগঠনবিরোধী, রাজনীতির বিরুদ্ধে চলে যায়, গোষ্ঠী বা ব্যক্তিস্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য সামনে আসে, তাহলে সেটা আপত্তিকর। আমার কাছে মনে হয়, যেহেতু কাউন্সিলে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হবে, নেতাকর্মীরা ভোটার হবে, তাদের স্বাধীন ভাবনা আছে বলেই মনে করি।’

 

ছাত্রস্বার্থ নয়, প্রাধান্য খালেদা জিয়ার মুক্তি
ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী, এমন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি রয়েছে। এ অবস্থায় ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নিয়ে একটি কার্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্বে আগ্রহীদের মধ্যে অবশ্য ছাত্র-অধিকার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও প্রতিশ্রুতি আসেনি। পাওয়া যায়নি ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে ক্যাম্পাসভিত্তিক কোনও পরিকল্পনার কথাও। সভাপতি ও সেক্রেটারি হতে আগ্রহীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচারণায়ও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিই একমাত্র হিসেবে প্রচার হতে দেখা গেছে। তবে, আগ্রহীদের অনেকেই ‘রাজপথে সর্বশক্তি প্রয়োগের’ জানান দিয়ে রেখেছেন।

ফরম সংগ্রহ করছেন পদপ্রত্যাশীরা

সভাপতি প্রার্থী মামুন খান বলেন, ‘আমি সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সর্বাগ্রে আমার মাতৃতুল্য খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঢাকার রাজপথে কার্যত ও দৃশ্যমান আন্দোলনের সূচনা করতে চাই।’ মামুন খানের প্রতিশ্রুতি— তিনি সারাদেশে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাবেন।

সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ আছে, দাবি করে আরেক সভাপতি প্রার্থী এরশাদ খান বলেন, ‘দেশে বহুমাত্রিক সমস্যা বিদ্যমান। আমি সভাপতি নির্বাচিত হলে চলমান সংকট নিরসন করবো।’

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ওমর ফারুক শাকিল চৌধুরী বলেন, ‘আগামী দিনে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই একমাত্র লক্ষ্য। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ছাত্রদলের সংকট দূর করবো।’

সেক্রেটারি প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু আফসান মো. ইয়াহইয়া বলেন, ‘আমি ২০০৭ সালের আগস্টে ছাত্র বিদ্রোহের ঘটনায় মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদের পক্ষে পাঁচ দফা ঘোষণা করেছিলাম। ওই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। দলের ও সংগঠনের দুর্দিনে সক্রিয় থেকেছি। কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাইয়ের যে সুযোগ তারেক রহমান সৃষ্টি করেছেন, সে বিবেচনায় প্রার্থিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা করতে আগ্রহী ছাত্রদলের সহ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক ডালিয়া রহমান। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সংকট, ছাত্রদের সংকট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংকট-সমস্যা বিরাজ করছে। গোটা রাষ্ট্রের এই সংকটকালে আমাদের নেতা তারেক রহমান ছাত্রদলের কাউন্সিল ডেকেছেন। এই কাউন্সিলে যেহেতু তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করবেন, সেহেতু আমি আগ্রহী হয়েছি।’

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা করছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। এ অবস্থায় যে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ দিয়েছে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মেসেজ। সারাদেশে ও দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করতেই এ কাউন্সিল করা হচ্ছে।’

কাউন্সিলের ভালোমন্দ

পুরো সময়ে মাত্র পাঁচবার কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছে ছাত্রদল। এরমধ্যে অন্তত তিনটি কমিটি তৈরি করেছে বিতর্ক। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ইলিয়াস আলী ও রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বাধীন কমিটি মাত্র তিন মাসের মাথায় ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হলেও দল ক্ষমতায় থাকায় ব্যাপক স্বেচ্ছাচারিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি খুনসহ একাধিক অভিযোগ ওঠে ওই কমিটির বিরুদ্ধে। এরপর ছাত্রদলের ওই কমিটি ভেঙে দেন খালেদা জিয়া।

এর আগে, জালাল আহমেদ ও মাহবুবুল হক বাবলুর নেতৃত্বে কমিটি হলেও তাদের নাম এখন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কাছে অজানা।

আশির দশকের শেষ দিকে গোলাম সারওয়ার মিলন ও আবুল কাশেম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটির শীর্ষ দুজনেই পরবর্তী সময়ে বিএনপি ছেড়ে যান। গোলাম সারওয়ার মিলন জাপায় যোগ দেন। গত নির্বাচনে তিনি বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টে যোগ দেন। এই কমিটির সেক্রেটারি আবুল কাশেম চৌধুরী। তিনিও বিদেশে চলে যান। পরে তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব নেন শামসুজ্জামান দুদু।

ছাত্রদলের সদ্য সাবেক এক নেতার ভাষ্য, ‘কাউন্সিল মন্দ নয়, কিন্তু কাউন্সিলের মাধ্যমে যারা আসে, তারা কি শেষ পর্যন্ত দলের সঙ্গে থাকবেন? এটা আবশ্যিকভাবেই হাইকমান্ডকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।’

কী হবে বাকি পদগুলোর?

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হবে সরাসরি। আর বাকি পদগুলোতে মনোনীত করা হবে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, মনোনীত করার সুযোগে রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসানের মতো পকেট কমিটি করার সুযোগ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে কমিটি বাছাইয়ে আরও কঠোর হতে শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দেন একাধিক ছাত্রনেতা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হবেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই ছাত্রদলের বাকি পদগুলো পূরণ করা হবে। তাদের পরামর্শের ভিত্তিতেই তা করা হবে।’

 কত সদস্যের কমিটি হবে?

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল পক্ষ জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্তরিকতার সঙ্গেই ছাত্রদলের কাউন্সিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার এই মনোভাবের কাছে ছাত্রদলের বিদ্রোহীরাও নমনীয় হয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতাদের একটি অংশ সিন্ডিকেট করার মানেই হচ্ছে তার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা। সেক্ষেত্রে ছাত্রদলের কার্যক্রমে তারেক রহমানের আরও বেশি মনোযোগ দাবি করে।

এ পক্ষটির পর্যবেক্ষণ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সরাসরি ভোট হলেও বাকি পদের সংখ্যা কত হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় পূরণ হবে, তা নিয়ে তারেক রহমান হস্থক্ষেপ না করলে বিষয়টি পূর্বাপর কমিটিগুলোর মতোই হবে। বিগত কমিটির পদে সাত শতাধিক মনোনীত করা হলেও আদতে কোনও কর্মসূচিতে তাদের সক্রিয়তা দেখা যায়নি।

এক্ষেত্রে বিগত সময়ে ‘পকেট’ কমিটি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে, এমন প্রশ্নে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন, তারা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হবেন, সেক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার থাকবে। আর তারা যদি ভুল করেন বা এ ধরনের চিন্তা করেন, সেক্ষেত্রে আমরা ভূমিকা রাখবো। ফলে, পকেট কমিটি করার কোনও সুযোগ নেই।’

প্রসঙ্গত, ছাত্রদলের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার তারিখ ১৯ ও ২০ আগস্ট। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩১ আগস্ট। ২২ থেকে ২৬ আগস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটের জন্য প্রচারণা চালাতে পারবেন। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ হবে।