প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নির্বাচনি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: মির্জা ফখরুল

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনভোট নিয়ে সকালে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল বলে মনে করছে বিএনপি। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুলের দাবি, ‘নির্বাচন শুরুই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে বড় রকমের বিধি লঙ্ঘন দিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ভোট শুরু হয়েছে।’ তার মতে, ‘ঢাকা সিটি ভোটে একটি তামাশার নির্বাচন হয়েছে।’ বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সিটি নির্বাচন শুরুই হয়েছে বড় রকমের আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে নিজে ভোট দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এটা সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল। কোনও ক্রমেই তার বক্তব্য নির্বাচন আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না।’

ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘অনেক ভোটকেন্দ্রে নানারকম অনিয়ম হলেও সরকারি বাহিনী কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কোনও কোনও কেন্দ্রে ইভিএমে ধানের শীষের প্রতীক ছিল না। ফলে অনেক ভোটার ধানের শীষে ভোট দিতে পারেনি। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট না দিতে দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে।’

অনেক সাংবাদিককেও লাঞ্ছিত করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভীতির সঞ্চার করেছে। শত শত অনিয়মের খবর ইসিতে পাঠানো হলেও তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।’

ফখরুল অভিযোগ করেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের হাতে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে রাখা হয়েছে যাতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সরকারের চাহিদা মোতাবেক যত সংখ্যক ভোট প্রয়োজন তত সংখ্যক ভোটের ব্যবস্থা তিনি করে দিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ইভিএমের মাধ্যমে জালিয়াতি করে ভোটার শূন্য নির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি দেখাতে পারে। তিনি দাবি করেন, বিএনপির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যারা এসব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে কেন্দ্রে এসেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রিসাইডিং অফিসার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমে বলেছেন, এজেন্টদের টিকে থাকার সামর্থ থাকতে হবে। এজেন্টদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। এটা বলে তিনি সরকার দলীয় এজেন্টদের সংঘাতের দিকে যাওয়ার ইন্ধন দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘একজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, বিরোধীদলের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।’ ফখরুল বলেন, আমি শুনেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমে বলেছেন, এ ধরনের নির্বাচন তিনি দেখতে চাননি এবং তিনি ফিঙ্গার প্রিন্ট বার বার দিয়েও মেলাতে পারেননি। পরে বিকল্প ব্যবস্থায় ভোট দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন এতটুকু সুষ্ঠু হয়নি তবে আমরা নির্বাচন কমিশনের ফলাফলের পর দলীয় অবস্থান তুলে ধরবো। নির্বাচন অবাধ হয়নি, তবে ফলাফল দেখবো আগে, এরপর সিদ্ধান্ত জানাবো।’ ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘ক্ষমতাসীনরা সারাদেশ থেকে লোকজন ঢাকায় এনেছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। যা বলতে গেলে শেষ হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র নেতারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ইভিএম দিয়ে ভোট সুষ্ঠু হয় না, আমরা বহু আগে থেকে তা বলে আসছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাতবার চেষ্টা করেও ইভিএমে ভোট দিতে পারেননি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির দলীয় এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যারা বাধা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে গেছে তাদেরও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, মারধর করা হয়েছে।’ প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে বহিরাগতদের জড়ো করে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে।’ ইভিএমের রিমোট আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা বুথের ভেতর অবস্থান নিয়ে ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দিচ্ছে কিনা তাও নজরদারি করেছে। তারা হামলাও করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।