স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্র করে অনুমোদিত যুক্তরাজ্য শাখার একটি উপ-কমিটি নিয়ে তোলপাড় চলছে যুক্তরাজ্য বিএনপিতে। শনিবার (১৬ জানুয়ারি) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেন্দ্র অনুমোদিত উদযাপন উপ-কমিটি থেকে ১৮ নেতা পদত্যাগ করেছেন। এ উপ-কমিটিসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে সিনিয়র অনেক নেতাসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন দলে চলমান গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, অস্বচ্ছ কার্যক্রম নিয়ে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বিএনপির গঠিত জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের যৌথ স্বাক্ষরে গত ১১ জানুয়ারি দলটির যুক্তরাজ্য শাখার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে দুই নেতার যৌথ স্বাক্ষর থাকলেও অনুমোদনের তারিখ ছিল না।
যুক্তরাজ্য বিএনপি সভাপতি এম এ মালিককে আহ্বায়ক, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদকে সদস্য সচিব এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সদস্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামাল উদ্দিনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ২৬৯ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এই কমিটি থেকে একে একে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সভাপতি, প্রভাবশালী সহ-সভাপতি, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ প্রভাবশালী ১৮ নেতা। এখন পর্যন্ত পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নেতারা হলেন যুক্তরাজ্য কমিটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা সাইস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সভাপতি লুৎফুর রহমান, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক এমদাদ হোসেন টিপু, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক আহবায়ক দেওয়ান মুকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মামুন, ও নাসিম আহমেদ চৌধুরী, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান মাহতাব, বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক ফেরদৌস আলম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দীন ও শেখ আলী আহমেদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সদস্য শাহরিয়ার জুনেদ, এম এ কাদির, সহ সাধারণ সম্পাদক টিপু আহমেদ, বার্নলি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফয়জুন নূর এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির তিন কার্যনির্বাহী সদস্য খিজির আহমেদ, আখতার হুসেন ও আব্দুল আহাদ।
পদত্যাগী নেতা শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন উপলক্ষে ২৬৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশাল কমিটি গঠন করা হয়। অথচ যুক্তরাজ্য বিএনপির মূল কমিটি ১৫১ সংখ্যা বিশিষ্টl বিএনপির স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০০ জন। সেখানে উৎযাপন কমিটির গঠন করা হয়েছে ১৪০ সদস্যবিশিষ্ট l বিভাগীয় ও জেলা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে ৫০ ও ৪০ সদস্য বিশিষ্ট। অথচ যুক্তরাজ্যের উপ-কমিটি মূল কমিটির প্রায় দ্বিগুণ l
উপ-কমিটি থেকে পদত্যাগ করা নেতা আব্দুল কাদির জানান, সাধারণত মূল কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি পদাধিকার বলে যেকোনও উপকমিটির সদস্য হয়ে থাকেন কিন্তু এখানে সেটি মানা হয়নি l প্রশ্ন হচ্ছে যদি যুক্তরাজ্য বিএনপির মূল কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিই উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকেন, তাহলে আর আলাদা করে উপ-কমিটির কোনও যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না।
শহীদুল ইসলাম মামুন বলেন, ২৬৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে অনেক বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের রাখা হলেও হাবিবুর রহমান ময়না, করিম উদ্দিনসহ দলের অনেক পুরনো নেতাকে রাখা হয়নি l দ্বৈত নীতি এবং কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িতদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে যা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপন্থী l কোনও এক ছদ্মবেশী ব্যক্তির ইচ্ছায় বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল ভারসাম্যহীনভাবে পরিচালিত হোক সেটা আমরা তৃণমূলের কর্মীরা চাইনা l
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমদ চৌধুরী বলেন, আমি নিজ দায়িত্বে সজ্ঞানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপ-কমিটি থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করেছি।
পদত্যাগী নেতাদের ব্যাপারে নবগঠিত কমিটির সদস্য যুগ্ম আহবায়ক কামাল উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এসব ব্যাপারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ উপ-কমিটি কমিটি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে। প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের লন্ডনে বড় আকারে সম্মাননা জানাতে আমরা কাজ করছি। আন্দোলন সংগ্রামে যারা ছিলেন তাদের অনুপ্রাণিত করতে গিয়ে কমিটির আকার বড় হয়েছে। আর আমি এখন পর্যন্ত কারও পদত্যাগপত্র পাইনি। ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমার কোনও ফেসবুক একাউন্ট নেই। আমি ফেসবুক চালাইও না। এটা তো উপ-কমিটি। কেউ যদি যুক্তরাজ্য বিএনপির কমিটি থেকে পদত্যাগ করতেন তাহলে আমি মন্তব্য করতে পারতাম।