স্বজনতোষণের বাজেট : আমীর খসরু

প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এই বাজেট প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নয়, স্বজনতোষণের বাজেট’। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বনানীতে তার বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমীর খসরু এ মন্তব্য করেন।

খসরু বলেন, ‘যারা হতদরিদ্র, দরিদ্র, দিন আনে দিন খায়, অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করে, যারা রিকশাওয়ালা, ঠেলা-গাড়িওয়ালা, যারা খাবার বিক্রি করে, চা দোকানদার, সর্বস্তরে অনানুষ্ঠানিক লোকজন - তারা তো বসে গেছে। তাদের জন্য প্রণোদনা বা ক্যাশ ট্রান্সফার হয়নি।’

আমীর খসরু বলেন, ‘এই বাজেট স্বজনতোষণের বাজেট। এই সরকার স্বজনতোষণের অর্থনীতি চালু করেছে। এর মাধ্যমে তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স আরও বড় হতে থাকবে - এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।’

করোনামহামারিতে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে দাবি করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে কম প্রণোদনা হচ্ছে বাংলাদেশে, স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে কম ব্যয় হচ্ছে বাংলাদেশে, শিক্ষা খাতে কম।’ তিনি যোগ করেন, তাহলে যাদের জন্য বাজেট তাদের জন্য অর্থের বরাদ্দ বা টাকাটা কোথায়? ১০/২০ হাজার কোটির টাকার কথা যখন তারা বলেন - রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে, পদ্মা ব্রিজে যায় আড়াই হাজার কোটি, ওই মেগা প্রজেক্টে যায়…। এই মুহূর্তে তো এসবের প্রয়োজন নাই।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে তাদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে ওই এক শতাংশ মানুষের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য কোনও অর্থনীতি হতে পারে না।’

আমীর খসরু বলেন, ‘এই বাজেটে দেশের দরিদ্র, হতদরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প, অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করছেন সেই ৫/৬ কোটি লোকের জীবন-কর্মের কী হবে তার প্রতিফলন হওয়া উচিত ছিল। আমরা বিএনপি থেকে বলেছি, এদের জন্য ন্যূনতম জিডিপির ৭/৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে প্রণোদনার জন্য।’

‘কিন্তু আমরা দেখতে পারছি তাদের জন্য জিডিপির সেই পুরনো ১/২ শতাংশ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা আমার মনে হয়-এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম।’

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ শতাংশের উপরে বরাদ্দ রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।

আমীর খসরু বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যার বেশি এখন কমবয়সী। যেটা আমাদের বড় সম্পদ। একে যদি সম্পদ হিসেবে আমরা অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করাতে চাই, তাদের মাধ্যমে যদি আমরা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চাই তাহলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকার কথা। কিন্তু আমরা দেখছি সেই আগের মতোই বরাদ্দ রাখা হয়েছে বাজেটে। সরকার এত বছর যেভাবে বাজেট দিয়ে আসছে, সেইভাবে এবারো দিয়েছে।’

বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে কোনও মন্তব্য না করে আমীর খসরু বলেন, ‘এই এপ্রিল মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে বাস্তবায়ন হয়েছে ২৮ কি ২৯%। প্রত্যেকটা খাতে একই অবস্থা। যেখানে আমাদের সম্প্রসারণশীল অর্থনীতি হওয়া উচিত মানুষকে বাঁচানোর জন্য, যেখানে রাজস্ব খাতে ও সরকারের ব্যয় খাতে একটা সম্প্রসারণশীল অর্থনীতির মাধ্যমে মানুষের আয় বাড়িয়ে, তাদের খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতিতে একটা চাহিদা সৃষ্টি করে এটাকে চালু করার যে প্রক্রিয়া বিশ্বের উন্নত দেশগুলো নিচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক দেশগুলো নিচ্ছে সেটা এখানে নেই। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম ব্যয় করছে নিম্ন ও সাধারণ মানুষের জন্য।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে বাইরে রেখে বাংলাদেশে যে অর্থনীতি সরকার চালু করেছে এই অর্থনীতিতে বাংলাদেশের কোনও ভবিষ্যত নেই।’

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার যে সহায়তা দিয়েছে তাকে ‘লোক দেখানো’ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘যে সমস্ত বরাদ্দ তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দিয়েছে এটা লোক দেখানো। ৫/৬ কোটি মানুষের জন্য মাথাপিছু ১/২ শ টাকাও পড়বে না। অথচ আমরা বিএনপি থেকে বলেছি, প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা ক্যাশ ট্রান্সফার করার কথা।’

কালো টাকার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘এই করোনার সময়ে যখন মানুষ দুঃসহ জীবনযাপন করছে তখন ২ হাজারের উপরে লোকের অপ্রদর্শিত আয় কালো টাকা। দেখলাম কত হাজার লোক কোটিপতি হয়েছে। আর সরকার বলছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে।’