প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিরোধী দলগুলোর কাছে যাবে বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনসহ সামগ্রিক রাজনৈতিক ইস্যুতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার (৩ জানুয়ারি) স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। ভবিষ্যৎ প্রশ্নে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে এবং সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের মনোভাব জানতে মতবিনিময় করতে চায় বিএনপি।

দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আগামী ১২ জানুয়ারি জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শুরু হওয়ার কারণে দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠেয় এসব কর্মসূচির পরই মতবিনিময় শুরু করবে বিএনপি।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের জেলা পর্যায়ে যেসব কর্মসূচি চলছে, গণসংযোগ চলছে, এসব শেষ করে মতবিনিময়ের বিষয়টি ফাইনালাইজড করবো।’

সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর কেউ কেউ চিঠি দিয়ে বিরোধী দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে—এমন তথ্য দিলেও আদতে তা হচ্ছে না। অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় অপরাপর বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় অংশ নেবে বিএনপি। এই আলোচনায় দলের কোন কোন নেতা অংশগ্রহণ করবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা ফরমাল কিছু না। মতবিনিময় করবো, যোগাযোগ করবো। যোগাযোগ এখনও করছি সবার সঙ্গে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে যারা যারা নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি, সেসব দলকে ধন্যবাদ জানাতে চায় বিএনপি। তিনি আরও জানান, খুব দ্রুত বিরোধী দলগুলোর কাছে যাবে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি দেখভাল করছেন দলের মহাসচিব। 

বিএনপির প্রভাবশালী একজন দায়িত্বশীল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইতোমধ্যে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে দলের যোগাযোগ হচ্ছে। সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে উভয় পক্ষ ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছে।

তার দাবি, মূল অবজেক্টিভগুলো নিয়ে উভয় পক্ষ সক্রিয়। বিশেষত রাজনৈতিকভাবে গুণগত পরিবর্তনের বিষয়টিকে বিএনপিকে কীভাবে দেখছে—এ বিষয়টিতে নজর থাকবে মতবিনিময়ে সম্মত দলগুলোর। অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণসহ মৌলিক কিছু বিষয়ে বিএনপির ‘ওয়াদা’ চাইতে পারেন রাজনৈতিক নেতারা। সেক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কী হবে— এর ওপরেই নির্ভর করছে পরবর্তী রাজনৈতিক ঐক্য।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দাবি করেন, পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়েই বিএনপি বিরোধী দলগুলোর কাছে যাবে। এই প্রতিশ্রুতির মধ্যে গুণগত পরিবর্তনের আভাস মিলবে। তবে চূড়ান্ত কিছু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

সরকারবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিএনপির মতবিনিময়ের প্রকাশ্য ঘোষণা পর দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথাও বলছেন কয়েকটি দলের নেতারা।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বুধবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অবশ্যই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি মতবিনিময়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ইতিবাচক।’

২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রেখে আসন্ন নতুন উদ্যোগের প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এই নেতা বলেন, ‘অবশ্যই রাজনীতিতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। যেসব জোট আছে, বিদ্যমান এসব জোট রেখে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য সংলাপ বা আলোচনা তো হতেই পারে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমে দেখেছি—বিএনপি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করতে চায়। রাজপথে কার্যকর বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পারস্পরিক আলোচনার উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক।’

বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি নেতারা তার অফিসে গেলে নিশ্চয়ই দলের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হবে। এই আলোচনা রাজনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বলেও মনে করেন তিনি। 

বাম ধারার একটি দলের মূল নেতা মনে করেন, বিএনপির আলোচনা করার পদ্ধতি আগামী দিনের আন্দোলনের মোমেন্টাম তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। যেহেতু ইস্যুগুলো প্রায় সমধর্মী, সে কারণে আন্দোলনের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত আসার সম্ভাবনাও জোরালো হয়ে উঠেছে।

তার ধারণা, প্রথম দিকে সিপিবি, বাসদসহ অন্যান্য দলের কাছে যেতে পারে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবে বিএনপি।

কোনও কোনও দলের প্রধানের প্রশ্ন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রেখে নতুন রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া কীরূপ হবে। এতে করে বিদ্যমান জোট থাকবে কিনা, এ প্রশ্নগুলো রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বরাবরই জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। জোটের ব্যাপারগুলো ইম্পরটেন্ট না। এগুলো গঠিত হয়েছে সুনির্দিষ্ট বাস্তবতায়। মতবিনিময়ের উদ্দেশ্য হলো—বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য, সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা।’