বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনা মানছে না ৩০ জেলা কমিটি

দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে ২০ জুন অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর দলের সকল সাংগঠনিক তৎপরতা সাময়িকভাবে সীমিত করে বিএনপি। পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় সহায়তা পৌঁছাতে সারাদেশে লিফলেট বিতরণের ঘোষণাও দেয় দলটি। ২৩ জুন থেকে দলীয়ভাবে প্রচারণা কার্যক্রম শুরু হলেও অন্তত ৩০টি জেলা কমিটি এখনও কোনও উদ্যোগ নিতে পারেনি।

এর মধ্যে দলের ঘাঁটি খ্যাত বগুড়া জেলা কমিটিও রয়েছে। তবে তারা ত্রাণ কমিটিকে ছয় লাখ টাকা সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

সোমবার (৪ জুলাই) বিএনপির ত্রাণ কমিটির পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্তত ৩০টি জেলা এখনও কেন্দ্রের নির্দেশে জনসাধারণের সাহায্য সংগ্রহের লিফলেট বিতরণ করেনি। তবে কোনও কোনও জেলা কমিটি অনুদান পাঠিয়েছে কেন্দ্রে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই ৩০টি সাংগঠনিক জেলা হচ্ছে— দিনাজপুর, সৈয়দপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ঢাকা জেলা, নরসিংদী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, বাগেরহাট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ফরিদপুর মহানগর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, শেরপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল দক্ষিণ, বরিশাল উত্তর, বরিশাল মহানগর।

ত্রাণ দিচ্ছেন বিএনপির এক কর্মী

জানতে চাইলে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে গতকাল (৩ জুলাই) ত্রাণ বিষয়ক কমিটির বৈঠক হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জ জেলায় ত্রাণ বিষয়ক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুত শুরু হবে।’

গত ২১ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ২৩ জুন থেকে বানভাসিদের জন্য ত্রাণের টাকা সংগ্রহ করতে সাধারণ জনগণের সহযোগিতা পেতে লিফলেট বিতরণের কথা জানান।

পরে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা একে একে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা দিতে ধারাবাহিক সরেজমিন সফর করলেও অনেক জেলার নেতারা তাতে গা করেননি।

এ প্রসঙ্গে ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা আমরা ফলোআপ করছি। কেন্দ্র থেকে অনেক জায়গায় নির্দেশনা পাঠাতে দেরি হয়েছে। যে কারণে অনেকে শুরু করতে পারেনি। এগুলো মনিটর করতে স্থানীয়ভাবে বিভাগীয় সাংগঠনিক মনিটরিং কমিটি হয়েছে।’

সোমবার (৪ জুলাই) বিকালে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা অনেক জেলা থেকে ১০ লাখ, অনেক জেলা থেকে ৭ লাখ, ৫ লাখ টাকা অনুদানের টাকা পাচ্ছি।’

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান জানান, ‘বন্যার্তদের সহযোগিতায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ স্থানীয় কমিটিগুলোর মাধ্যমে অন্তত ২ কোটি টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।’

 

নেতাদের হাতে অনেকে তুলে দিচ্ছেন মানবিক সহায়তা

এমপি-প্রার্থীদের কাছে চিঠি

ইকবাল হাসান মাহমুদ জানান, এই প্রথমবার দেশের কোনও দুর্যোগে দেশের মানুষের সরাসরি সহযোগিতা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের কার্যক্রমে এরইমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বাধা দিচ্ছে। বিএনপি এসব বাধা পেরিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’

দলের ত্রাণ কমিটি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সকল এমপি প্রার্থীদের কাছ থেকে নগদ অর্থসহ ত্রাণ সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের পক্ষ থেকে এখনও তেমন সাড়া মিলছে না।

ইকবাল হাসান মাহমুদ মনে করছেন, সামনে কোরবানির ঈদ থাকায় অনেকে ব্যয় নির্বাহ করতে চাচ্ছেন না। ঈদের পর তহবিল গঠন প্রক্রিয়া আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 

বন্যার্তদের খোঁজ নিচ্ছেন খালেদা জিয়া

বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় প্রতিনিয়ত অসহায় মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ত্রাণ কার্যক্রম তদারক করছেন, নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির মিডিয়া টিম ও চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাসায় আসার পর ম্যাডামের শরীরে আর নতুন কোনও উপসর্গ পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছেন। ম্যাডাম অসুস্থ থাকার পরও গণমাধ্যমে দেশের খবর রাখছেন।’