আর মাত্র পাঁচ দিন পর বহুল আলোচিত ‘১০ ডিসেম্বর’। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে রাজধানীর ‘নয়া পল্টন’ এলাকা। আলোচনার মূলকেন্দ্রে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বিএনপি দাবি করেছে, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য তাদের ‘নয়া পল্টন’ই দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণসমাবেশে এত বেশি পরিমাণ অংশগ্রহণকারী আসবে—তাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই উত্তম।
কিন্তু নাছোড় বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই প্রতিদিনের বক্তব্যে নয়া পল্টনের দাবি করছেন।
সরকারি দলের পক্ষ থেকে অবশ্য এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা জবাবও দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তুলেছেন, বিএনপি কেন সমাবেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে। পাশাপাশি তার পর্যবেক্ষণ—‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন বিএনপি যেতে চায় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের ভাষণ বিএনপির পছন্দ নাও হতে পারে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ভাষ্য, ‘আমরা বিগত দিনে বহুবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে আবেদন করেছি। কিন্তু সবসময় আমাদের পল্টনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন সবসময়ই নয়া পল্টনে মিটিং করি। হঠাৎ করে কী হয়ে গেলো যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হলো! এতে দুরভিসন্ধি আছে বলে মনে করি।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল কয়েক দফায় জানিয়েছেন, নয়া পল্টনেই তারা বছরের পর বছর সমাবেশ করছেন। এই স্থানেই খালেদা জিয়া দফায় দফায় সমাবেশ করেছেন। সে কারণে এই নয়া পল্টনেই অনুমতি দিতে হবে।
রাজনীতিতে এত আলোচনার এই নয়া পল্টন এলাকাটির সূচনা ঠিক কবে হয়েছিল? নয়া পল্টন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ। এখানকার বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা, সাবেক খ্যাতনামা ওয়ার্ড কমিশনার নাজির হোসেন রচিত ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ শীর্ষক গ্রন্থে বলা হয়েছে নয়া পল্টনের কথা।
নাজির হোসেন উল্লেখ করেন, ‘পুরানা পল্টন ও নয়া পল্টন এলাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনানিবাস ছিল। দিলকুশাস্থ এই এলাকাটিকে গার্ড বাজার বলা হতো। ১৮৪০ সালে জনসাধারণের স্বার্থে বাজারটি সেখান থেকে অপসারণ করা হয়। পরবর্তীকালে সেনানিবাসটি রমনা রেসকোর্সে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে মিরপুরের বেগুনবাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। সেনানিবাস ছিল বলেই ওই এলাকাটি পুরানা পল্টন ও নয়া পল্টন নামে পরিচিত হয়ে আসছে।’
কালের আবর্তনে ২৮/১, ভিআইপি রোড, নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয় খোলে বিএনপি। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে বিএনপি কার্যালয় করলেও খালেদা জিয়ার আমলে পাল্টে যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
দলের চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং ও বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এরশাদ সরকারের পতনের পর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে রাজধানীর নয়া পল্টনের বর্তমান ভবনটিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাজ শুরু করে বিএনপি।’
শায়রুল কবির খান জানান, ‘এর আগে ধানমন্ডির ২৭ নম্বরে ছিল অফিস, সেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বসতেন।’
একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি কার্যালয়ের ভবন নিয়ে একটি জটিলতা ছিল। কয়েক বছর আগে নিষ্পত্তি করা হয়। যদিও বিএনপির এক নেতা দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উভয় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ে জটিলতা আছে।
ভবন নিয়ে যত জটিলতাই থাকুক, আপাতত বিএনপির চিন্তায় এখন নয়া পল্টন। বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে এরইমধ্যে দুইবার লিখিত চিঠি ও তিনবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চলমান এই আলোচনার মধ্যেই নয়া পল্টনের নিরাপত্তা বাড়িয়েছে পুলিশ। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি ছিল। শনিবার রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
বাড়তি নিরাপত্তার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি অফিসের সামনে নতুন করে কোনও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়নি। বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের নিয়মিত ডিউটি। এটা সবসময়ই থাকে।’