আ.লীগের কোনও ভালো কাজ নেই: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে। বিচার, নির্বাচন ও শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। তাদের একটাও ভালো কাজ নেই, তারা এই দেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে এ দেশের মানুষ যে সংবিধান রচনা করেছিলেন সেটাকে বারবার কাটাছেঁড়া করে অকার্যকর একটা সংবিধান করেছে। বাহাত্তরের সংবিধানের মূল ভিত্তি নষ্ট করে দিয়েছে। তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে সংবিধানকে ধ্বংস করেছে।’

শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে সিলেট মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অন্যায়, বেআইনিভাবে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এর আগে তাকে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছিল চার বছর।’

সিলেটের সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সারা বাংলাদেশে ভয়াবহ রকমের নির্যাতন-নিপীড়নের সময় চলছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। শত শত নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। হাজারো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও তারা কি পেরেছে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে? পারেনি বন্ধুগণ। আজকে আরও দুর্বার গতিতে মানুষ জেগে উঠেছে। জেগে ওঠেছে একটিমাত্র লক্ষ্যে, যেভাবেই হোক এই দানবীয় সরকার, যারা আমাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে, পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন্ধুগণ এই সরকারের অপকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। একটা ভালো কাজও দেখাতে পারবেন না। সবচেয়ে ভয়াবহ যে কাজ তারা করেছে, তারা এই বাংলাদেশের সমাজকে পুরোপুরি বিভক্ত করে ফেলেছে এবং একটা দূষিত সমাজে পরিণত করেছে। আমাদের যারা যুদ্ধ করেছিলেন, যারা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটা স্বাধীন দেশের, তারা আজকের এই সংবিধান দেখতে চাননি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখুন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কত খারাপ হয়েছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় চড়-থাপ্পড় মেরে ১১ কোটি টাকা নিয়ে যায়। পরে আবার ওরাই খুঁজে পায়, তার মধ্যে আবার দুই কোটি টাকা পাওয়া যায় না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন খারাপ হয়েছে, আজকে আমাদের মা-বোনদের নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। তারা নিরাপদ বোধ করেন না এই দেশে। আজকে কোথাও কোনও আইনের শাসন নেই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থাকে তারা (সরকার) সম্পূর্ণ নিজেদের করায়ত্ত করে নিয়েছে। এইভাবে তারা আজকে দেশ পরিচালনা করছে শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে। তারা বিদ্যুৎ সেক্টরকে বেছে নিয়েছে তাদের টাকা আয় করার জন্য, চুরি করার জন্য। আদানি, ভারতের বিশাল কোম্পানি, তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমরা হিসেব করে দেখেছি, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা লোকসান হবে। অন্য দেশের চেয়ে দ্বিগুণ দামে আমাদেরকে কয়লা কিনতে হচ্ছে। চুক্তির ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে প্রায় ১৬ টাকার মতো, যেটা এখন আট টাকার মতো দিতে হচ্ছে। এটাও আবার দুই মাসে তিনবার দাম বাড়িয়েছে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে জনগণের পকেট কেটে তারা টাকা নিচ্ছে।’

ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি তিনটি বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকজন নিহতের ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই প্রাণের কি কোনও মূল্য নেই? কাদের জন্য এরা মারা যাচ্ছে? তাদের বিচার করতে হবে। সরকারের ব্যর্থতা, তাদের ডিপার্টমেন্টগুলোর ব্যর্থতা, যারা দায়িত্বে আছেন তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’