সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মিছিলে মিছিলে মুখর রাজধানীর নয়া পল্টন এলাকা। শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকেই লোক জড়ো হচ্ছে সেখানে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকা ছড়িয়ে যায় জমায়েত।
সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৭টা থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন। সমাবেশের মঞ্চে দলের নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ গতরাত থেকেই কার্যালয়ে সামনে রাত্রীযাপন করেন বলে জানান। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রকম স্লোগান দিচ্ছেন।
সকাল ১০টার মধ্যেই ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত রাস্তা দখল করে নেন বিএনপির সমর্থকরা। সড়কের দুই পাশ দখল করে মিছিল স্লোগান দিতে থাকেন তারা। বর্তমানে এই সড়কের যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ আছে। এছাড়া পল্টন ও এর আশপাশ এলাকাগুলোতেও বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড ভাবে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। রাজপথে গণপরিবহন কম থাকায় এবং পুলিশি তল্লাশির ভয়ে অনেক নেতাকর্মী ভেঙে ভেঙে নয়া পল্টনের দিকে আসছেন বলে জানান। কাকরাইল থেকে নয়াপল্টনের দিকের প্রায় সব রাস্তা মানুষে ভরে গেছে।
এদিকে সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে সমাবেশের মঞ্চ থেকে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের আয়োজনে দেশাত্মবোধক ও দলীয় গান পরিবেশন করা হচ্ছে। গানের তালেতালে বিএনপির নেতাকর্মীও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।
সমাবেশে আসা কয়েক জনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, কোনও ধরনের সংঘাত চান না তারা। বরং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে একটি সুষ্ঠু সমাধান চান। তারা মনে করেন, বর্তমান সরকার পদত্যাগ করলেই এই সমাধান আসবে। তাই সরকার পদত্যাগের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা দলের সব কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন।
কুমিল্লার চান্দিনা থেকেই ৭ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে এসেছেন দাবি করে কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তার হোসেন বলেন, 'আমরা নেতাকর্মীরা ৪০টা বাস ও ৮টা হাইয়েস গাড়ি নিয়ে রাত ২টায় রওনা দিয়ে ভোরে পল্টনে এসেছি।'
কর্মসূচি একদিন পিছিয়ে যাওয়ায় কর্মীরা আরও চাঙা হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের কীর্তিকলাপে প্রমাণিত হয় তারা একটা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা সংঘাতের দিকে যেতে চাই না। আমরা চাই শান্তি। আমরা চাই এই সরকার দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে আমাদের দাবি মেনে নিক। আমরাও চাই আমাদের আজকের এই সমাবেশ যেন উৎসবে পরিণত হয়।’
টাঙ্গাইলের ভুইয়াপুরের যুবদল কর্মী সুজন বলেন, ‘ভোর ৫টায় রওনা দিয়ে ৯টায় এসেছি। মাঝে পুলিশ আটকে দেওয়ার ভয়ে আমরা সবাই বাস থেকে নেমে ভেঙে ভেঙে সমাবেশে আসছি। এই যে এত কষ্ট, এটা করার একটাই কারণ। দেশে শান্তি আসুক। মানুষের মনে যে কষ্ট ওইটা এখন আর কেউ চাপা রাখতে পারতেছে না। তাই আমার এলাকা থেকেই দল না করা অনেক লোকও আসছে।’
আর কোন ভয় নয়- এরকম মন্তব্য করে রাজধানীর কাফরুল থানা মহিলা দলের কর্মী মমতাজ বেগম বলেন, 'আর ঘরে বসে থাকার সময় না। এবার আমাদের মা-বোনদেরও রাস্তায় নেমে আসছে হবে। আর কোনও ভয় নাই, ভয় করলে আর এইখানে আসতাম না।’
শুক্রবার দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে আরও ১২টি জায়গায় সমাবেশ করবে অন্যান্য বিরোধী দলগুলো। বিএনপির বাইরে অন্য দলগুলোর সমাবেশ বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।