তফসিলের আগে-পরে কর্মসূচি জোরালো করবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো

সরকার পতনের দাবিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে অবস্থান, শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রাসহ নানামুখী কর্মসূচি পালন করলেও ধীরে ধীরে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আনবে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রোডমার্চ, সমাবেশ, কৃষক সমাবেশ, শ্রমজীবী কনভেনশন উল্লেখযোগ্য। এ পর্ব শেষে নতুন কর্মসূচি কবে দেওয়া হবে, তা ঠিক হয়নি। বিএনপির কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে জনসভায় হরতাল-অবরোধ দেওয়ার কথা বললেও আদতে এ বিষয়ে দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে।

বিরোধী নেতাদের কারও ভাষ্য, হরতাল-অবরোধ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবার কোনও নেতার দাবি, হরতাল-অবরোধ নিয়ে এখনও আলোচনা টেবিলে ওঠেনি। রাজনৈতিক বক্তৃতা হিসেবেই এসব বলা হচ্ছে।

তবে উভয়পক্ষের নেতারা মনে করছেন— পদযাত্রা ও  অবস্থানসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারকে চাপে ফেলা সহজ নয়। সেক্ষেত্রে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

বিএনপি ও যুগপতে যুক্ত প্রভাবশালী বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাঁটা-বসা কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে কার্যকর কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এক্ষেত্রেও নেতাদের দুই রকম ভাষ্য পাওয়া গেছে।

কোনও কোনও নেতার মত, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই কঠোরতা প্রদর্শন শুরু করবে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। কেউ কেউ বলছেন, নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার সময়কে কেন্দ্র করে কর্মসূচি জোরালো করা হবে।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের তরফ থেকে আলোচনার কোনও লক্ষণ নেই। তারা বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে নির্বাচন করার কাজ করছে। আমরা কোনও অবস্থাতেই এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে যাবো না। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে আমরা অলআউট কর্মসূচির দিকে যাবো। ঘেরাও, অবরোধ, হরতালসহ নানা বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। নির্বাচনের শিডিউল দিলেও সরকারকে বিদায় না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে হরতাল-অবরোধ দিয়ে এই অবৈধ সরকারকে অচল করে দেওয়া হবে। একইদিন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস উল্লেখ করেন, ‘আমাদের আগামী দিনের আন্দোলনকে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাবো। ঝড়ের গতিতে আন্দোলন হবে।’

এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম একজন নেতার ভাষ্য, এগুলো বক্তৃতায় নেতাদের ল্যাংগুয়েজ। বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়নি।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে হরতাল-অবরোধ নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। তবে মার্কিন ভিসা রেস্ট্রিকশনের পর স্পষ্ট হয়ে গেছে, সরকার যেনতেনভাবে আরেকটি নির্বাচন করতে চাইছে, এবার আর সে সুযোগ নেই। তাদের যেতেই হবে। ইতিহাস থেকে যদি তারা শিক্ষা না নেয়, তাহলে তাদের ক্ষমতা থেকে নামানোর মতো কর্মসূচি আসবে। এটাই মিন করছি আমি।’

দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন ও কর্মসূচির ধরন শান্তিপূর্ণ রাখার পর নতুন করে হরতাল-অবরোধ কেন্দ্র করে সহিংসতা সৃষ্টি হবে কিনা— এ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে। বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, কর্মসূচিতে সহিংসতা সৃষ্টি করে সরকারিপক্ষ। বিগত ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে তা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। সেক্ষেত্রে হরতাল বা অবরোধ দিলেও তা শান্তিপূর্ণ থাকবে কিনা, পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপর। এ বিষয়টির একটি ইঙ্গিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) গুলশানে একটি ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, গ্রেফতার, মামলা ও বাধার মুখে আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আমরা এর শেষ পর্যন্ত যাবো। তবে পরিণতি কী হবে, এটা নির্ভর করে সরকারের ওপর। সরকারের আচরণ কী হচ্ছে— তার ওপর নির্ভর করবে আমাদের আচরণ কেমন হবে।

এ প্রসঙ্গে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অক্টোবরের ৫ তারিখ পর্যন্ত  কর্মসূচি আছে। এরপরের কর্মসূচি কী আসবে, তা ঠিক হয়নি। আর আন্দোলনে সহিংসতার মানেই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সহিংসতার যত উদাহরণ আছে, সব আওয়ামী লীগের। এখন যোগ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘সহিংসতা সৃষ্টি করে সরকার। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে।’

এ ব্যাপারে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে গণতন্ত্র মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ একনেতা উল্লেখ করেন, চূড়ান্তভাবে আন্দোলন কতদূর অব্দি উঠবে— তা নিয়ে এখনও চিন্তায় আছে বিএনপি। আন্দোলনের মাত্রা-ই নির্ধারণ করবে হরতাল ও অবরোধ কখন আসবে। বিশেষত, দলীয় কর্মসূচিগুলোতে গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণ দিনে দিনে বাড়লেও শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি আন্দোলনে এখনও যুক্ত হয়নি। এ বিষয়টি নিয়েও নেতৃত্বপর্যায়ে পর্যালোচনা রয়েছে।’