গণতন্ত্র না থাকায় পুলিশতন্ত্র একটু বেশিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে: গয়েশ্বর

গণতন্ত্র না থাকায় পুলিশতন্ত্র একটু বেশিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) গণঅধিকার পরিষদের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ  (রেজা কিবরিয়া)।

বিএনপির ২৮ তারিখের সমাবেশে পুলিশের অনুমতির প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজনৈতিক ফয়সালা হবে রাজনৈতিক দল, সরকার, সরকারের রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। সেটা বাকযুদ্ধের মধ্য দিয়েই হোক আর যেভাবেই হোক, সেটা হবে। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত দেবে না, পুলিশ সিদ্ধান্ত দেবে। সুতরাং, গণতন্ত্র না থাকায় পুলিশতন্ত্র একটু বেশিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কারণ, এই সরকারের কথা, যেই লুটপাট করুক না কেন, তারা তো সবাই ভালো আছে। সবাইকে ভাগ দেয়। এজন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে কিছু সুবিধাভোগী তৈরি করতে পেরেছেন। সেই সুবিধাভোগীরাই ভাবছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে গেলে তার যতটা না ক্ষতি হবে, তার থেকে বেশি ক্ষতি হবে তাদের (সুবিধাভোগী)। এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে হবে।’

দেশে হিন্দুদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ৮০ শতাংশের ওপরে আওয়ামী লীগের দখলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সংসদে যারা এমপি, মন্ত্রী আছেন, তাদের শতকরা ৮০ জনের বাড়ি হিন্দু বাড়ি। অর্থাৎ, হিন্দু বাড়ি দখল করে তারা বাড়ি করেছে। হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। এটা আমাদের জরিপ করা আছে। জরিপ থেকে বলছি।’

তিনি আরও  বলেন, ‘দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় হিন্দু সম্প্রদায়। কোনও হিন্দু লোকের সঙ্গে যদি একা একা কথা বলেন, দেখবেন তাদের মধ্যে কত ক্ষোভ। তাহলে ভোট দেয় কেন? কারণ জামায়াতে ভোট না দিলে জামায়াত তার বাড়িঘর পোড়ায় না, বিএনপিকে ভোট না দিলে বিএনপি তার ঘরে আগুন দিতে যায় না। কিন্তু আওয়ামী লীগে ভোট না দিলে তারা বাড়িতে গিয়ে আগুন দেয়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘হিন্দুদের তাড়াতে পারলে সম্পদ পাওয়া যায়, আর দেশে থাকলে ভোট পাওয়া যায়। হিন্দুরা যদি আপনাদের (বিরোধী দল) কাছ থেকে নিরাপত্তা পায়, তাহলে আওয়ামী লীগে ভোট দেবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক সৌজন্যবোধ তখনই থাকে, যখন গণতন্ত্র থাকবে। গণতন্ত্র যেখানে থাকে না সেখানে মানুষ বেপরোয়া হয়ে যায়। ক্ষমতার পেছনে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন যখন পাহাড় সমান হয়ে যায়, তখন বারবার ক্ষমতায় থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা চেপে বসে। তখন তাদের থেকে বিদায় নেয় মনুষত্ববোধ।’

গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘সরকার চেষ্টা করছে গাবতলীর মতো একটি গরুর হাট জমাতে। দর কষাকষির অফার, আসনের নিশ্চয়তা, সঙ্গে কাড়ি  কাড়ি টাকা। আমার মনে হয়, তারা গুছিয়ে উঠতে পারছেন না। কয়েকদিন আগে আমেরিকা সফরের সময় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নাকি কিছু কিছু জিনিস কেনার জন্য অনেক  টাকা নিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি কিনতে পারেননি। কিছু কিনতে না পেরে মাথা গরম করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অশ্রাব্য বক্তব্য দিচ্ছেন। মানুষ কখনও মানুষকে নিয়ে এমন বক্তব্য দিতে পারে না।’

সমাবেশের জন্য পুলিশ থেকে অনুমতি নেওয়াকে অগণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘পুলিশ থেকে এখন অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করতে হবে, এটাকে আমি অগণতান্ত্রিক মনে করি। এই হাসিনা সরকার গণতান্ত্রিক কোনও চিন্তা-ধারার মধ্যে পড়ে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবাই ২৮ তারিখের জন্য অপেক্ষা করছে। সরকারি দলের লোকেরা ভীত এবং আতঙ্কিত। তারা চিন্তা করছে দেশ থেকে কখন পালাতে হবে। সরকারি লোকেরা কোথায় এবং কোন পথ দিয়ে পালাবে সেগুলো চিন্তা করে রেখেছে। আমরা ২৮ তারিখ বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে সহযোগিতা করবো।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন— গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।