আবার হাসপাতালে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আবারও হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল নাগাদ তাকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে। এদিন সকালে বাংলা ট্রিবিউনকে তার মেডিক্যাল স্টাফসূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। 

সূত্রটি জানায়, আজ বিকাল নাগাদ কয়েকটি পরীক্ষার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসনকে এভার কেয়ারে নেওয়া হবে। তবে সূত্রটি পরিচয় উদ্ধৃত না করার অনুরোধ জানিয়েছে। 

এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিকাল ৪টার পর বেগম খালেদা জিয়াকে এভার কেয়ারে নেওয়া হবে। কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার বিষয়ে তিনি হাসপাতালে যাবেন।

হাসপাতালে ১৫৬ দিন থেকে গত ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। হাসপাতাল থেকে ফিরেছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। চিকিৎসকদের পরামর্শে অল্পবিস্তর হাঁটাচলাও করছিলেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে মেডিক্যাল স্টাফসূত্র জানায়, বিকাল নাগাদ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা মনে করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেন। তবে এখনও তা নিশ্চিত নয়।

বিদায়ী বছরের ২৬ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসার পরই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। 

২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর ওই বছরের ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। তখন তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। ছয় দিন পর আবারও ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ফিরতে হয় তাকে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফিরে আসেন খালেদা জিয়া।

২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসের নমুনা টেস্ট রেজাল্ট ‘পজিটিভ’ আসে খালেদা জিয়ার। ২৭ এপ্রিল রাতে তাকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৮ এপ্রিল বিএনপি-প্রধানের চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৯ জুন রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন বেগম জিয়া।

২০২১ সালের ১৯ জুলাই মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেন বিএনপি-প্রধান। ১৮ আগস্ট টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেন তিনি।

দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ক্রমাগত শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। ২৫ অক্টোবর তার শরীর থেকে নেওয়া টিস্যুর বায়োপসি করা হয়। ৩১ অক্টোবর বায়োপসি রিপোর্ট হাতে পায় মেডিক্যাল বোর্ড। ২৭ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

তৃতীয় দফায় ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ারে ভর্তি করানোর পর সেদিন রাতেই সিসিইউতে নিতে হয় খালেদা জিয়াকে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পর্যায়ে এসে বেগম জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত খারাপ হয়। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে ২৮ নভেম্বর (সোমবার) খালেদা জিয়ার ছয় জন চিকিৎসক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিস্থিতির কথা জানান। প্রথমবারের মতো চিকিৎসকরা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভার সিরোসিসের বিষয়টি প্রকাশ করেন। তার অন্যতম চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মিলিয়ে অন্তত ১৭-২৩ জন চিকিৎসক কাজ করেছেন বেগম জিয়ার মেডিক্যাল টিমে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার প্রায় দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর প্রতি ছয় মাস অন্তর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সরকার। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেয়াদ নবায়ন ও প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আগামী মাসে মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে পারিবারিকভাবে আবারও আবেদন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।