ঢাকায় তিনটি ইফতার নিয়ে বিএনপির কৌশলী অবস্থান

কৃষক দল, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) ইফতার নিয়ে কৌশলী অবস্থান দেখিয়েছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য দুটি দলের ইফতারে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং কৃষক দলের ইফতারে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ থাকায় কোনও ইফতারেই যোগ দেননি।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি ইফতারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে, উভয়পক্ষ আবার ঘনিষ্ঠ হতে চলেছে। এরই প্রভাব দেখা যাচ্ছে ইফতার মাহফিলগুলোতে।

তবে শনিবার (৩০ মার্চ) অনুষ্ঠিত জামায়াত ও এবি পার্টির ইফতার নিয়ে আলোচনা ছিল বেশ। পরস্পরবিরোধী দল দুটোর ইফতারে বিএনপির কোন কোন নেতা অংশগ্রহণ করেন, তা নিয়ে ব্যাপক রহস্য ছিল। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ জামায়াত বা এবি পার্টির ইফতারে অংশ নেন কিনা, এ নিয়ে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ধোঁয়াশা ছিল। শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতেও আলোচনা ছিল জামায়াতের ইফতারে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল।

শনিবার রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজকে কৃষক দলের ইফতারে যোগ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মহাসচিব অসুস্থ থাকায় কোথাও যেতে পারেননি। জামায়াতের ইফতারে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ড. কর্নেল অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালামসহ অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, আতাউর রহমান ঢালী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জহির উদ্দিন স্বপন, অপর্ণা রায়, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত অংশগ্রহণ করেন।

কৃষক দলের ইফতারএবি পার্টির ইফতারে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আশরাফ উদ্দিন নিজান, রুমিন ফারহানা, বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনি, এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মোর্ত্তুজা প্রমুখ।

জামায়াতের ইফতারে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, তার দল দীর্ঘ ৮ বছর একসঙ্গে ইফতার করতে পারেনি। উল্লেখ্য, জামায়াতের ইফতার নিয়ে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে।

রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ইফতারে সদ্য কারামুক্ত ২০০ নেতাকে সংবর্ধনা দেয় কৃষক দল। এতে তারেক রহমানসহ অন্য নেতারা অংশ নেন।

রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সম্মানে এবি পার্টির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে গুলশানের একটি হোটেল। এতে বিএনপিসহ ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনকারী প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা, ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন বলে জানান দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বিএনপির ইফতারে যোগ দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার। ১২ দলীয় জোটের ইফতারেও যোগ দেন তারেক রহমান ও শফিকুর রহমান। তবে শনিবার জামায়াতের ইফতারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দেখা গেলো না।

দলের একনেতার ভাষ্য, ‘বিএনপি কৌশলী আচরণ করছে। সবাইকে সন্তুষ্ট রাখছে।’