বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সংস্কারের গান শুনিয়ে আমাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখবেন, আর নির্বাচনের কথা বললে আমাদের অপরাধ হবে? একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ১৭ বছর ধরে অপরাধ করে আসছি। যতদিন নির্বাচন না হবে ততদিন বিএনপি এই অপরাধ করবেই।
সোমবার (৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ পেশাজীবী জোট আয়োজিত ‘গণহত্যার বিচার, সংলাপ, সংস্কার ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য একেক সময় একেকটা ইস্যু তৈরি করেছে। ১৬ বছরে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াইশ’ ইস্যু তৈরি করেছে। সকালে একটা ঘটনা তৈরি করলো হৈচৈ পড়ে গেলো, বিকালে আরেকটা ঘটনা দিয়ে সেটা চাপা পড়ে গেলো। একটার পর একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা সমালোচনায় অভ্যস্ত তারা কোনও কর্মে অভ্যস্ত না। তারা সমালোচনায় খুব পটু; তখন বলতো বিএনপি কী করে। তারা আসল ঘটনা থেকে দূরে রাখার জন্যই একটার পর একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। আজ যারা আছে তারা কী সেটা অবলম্বন করতে পারে না? এ জন্যই হঠাৎ করে একটা ইস্যু এসে গেছে সীমান্তে আরাকানের। আবার বলে না, বিষয়টা চূড়ান্ত না। তবে ভেতরে কিন্তু একটা আলোচনা আছে, ইচ্ছা আছে।’
শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করেল ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট যদি শেখ হাসিনা না পালিয়ে পদত্যাগ করতো, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া লাগতো। তাহলে এখন নির্বাচন কমিশনের দেড়-দুই বছর সময় লাগছে কেন? তাদের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এটাই নিয়ম। তাহলে কী প্রত্যেকটা সরকার পরিবর্তনের পর আমরা দুই বছর বসে থাকবো প্রস্তুতির জন্য? নির্বাচন কমিশন কীসের প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করছে?’
নির্বাচনই বড় সংস্কার মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগে নির্বাচন পরে সংস্কার। আর নির্বাচনটাই তো বড় সংস্কার। কারণ চারটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনব্যবস্থাকে যা-তা অবস্থা করে দিয়েছে। সেখানে দাবিটা কী সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন। সুতরাং গণতন্ত্র সংস্কারের বিপক্ষে না। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে অন্যান্য সংস্কার করতে আমাদের একটি ভিত্তি স্থাপন হবে।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘সংস্কার অবশ্যই দরকার। কিন্তু বাস্তবতার নিরিক্ষে আপনাদের সেটা করতে হবে। এমন কিছু করা যাবে না, যেটা শেষ পর্যন্ত হবেই না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি কখনও প্রতিহিংসার রাজনীতি করেনি। এর ফলে যে সুবিধাটা হয়েছে, অনেকেই ভেবে নিয়েছে বিএনপির বিরুদ্ধে লেখা ও বলা সবচেয়ে নিরাপদ। সাংবাদিকরা আগে বলতো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নাই। তাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যেতো না, কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে নানা কথা লেখা হতো। তবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মানেই সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নয়। সংবাদপত্রের মালিক বা প্রকাশকের স্বাধীনতাই মূল স্বাধীনতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মিডিয়া মালিক সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে, ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোনও নিউজ করে না। অনেক মিডিয়ার পয়সার অভাব নেই, কিন্তু সাংবাদিকদের ঠিকমতো বেতন দেয় না।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘কোর্ট আমাদের সেকেন্ড হোম হয়ে গেছে। প্রায়ই সেখানে যেতে হয়। প্রধান উপদেষ্টার ওপরও অনেক মামলা দেওয়া হয়েছিল। আমরা কিন্তু তার প্রতিবাদ করেছিলাম। তিনি নিজের বিরুদ্ধের সব মামলা প্রত্যাহার করে চেয়ারে বসেছেন। আমি গয়েশ্বর কেন এখনও কোর্টে হাজিরা দিই?’
সভায় আরও ছিলেন– বিএনপির চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, পেশাজীবী জোটের সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির বেপারী, প্রজন্ম অ্যাকাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজী প্রমুখ।