বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, নির্বাচনের দিনটার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। তাই যত বাঁধা-বিপত্তি আসুক না কেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে। এর সঙ্গে কোনও আপস নয়।
রবিবার (২৯ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল আয়োজিত ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যারা সকালে এক কথা, দুপুরে এক কথা, আবার বিকালে আরেক কথা বলছেন, তাদেরকে বলবো— আসুন, আমরা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। ত্রুটি-বিচ্যুতি যেগুলো থাকবে, আমরা বসে সমাধান করি। আর মানুষ যাকে ভোট দেবে, সেই দল সরকার গঠন করবে। আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করি।
তিনি বলেন, স্বৈরতন্ত্রের যারা বিরোধিতা করে, তারা গণতন্ত্র প্রত্যাশা করে। আর যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়, তারা স্বৈরাতন্ত্রকে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে। কিন্তু গণতন্ত্রে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনকে যদি বাদ দেওয়া হয়, বিতর্ক করা হয়— তাহলে তো পরোক্ষভাবে স্বৈরতন্ত্রের পক্ষ হয়ে যায়। আমি কোনও দলের সমালোচনা করছি না। তবে সবার মতামত থাকতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন হলে আমরা জানি কারা কত ভোটের অধিকারী। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো পার্টি, বিএনপিরও অনেক আগে তাদের জন্ম। পাকিস্তান আমলে হওয়ার পরেও পাকিস্তান আন্দোলন তারা সমর্থন করেনি। ইসলামিক রিপাবলিকেও তারা দুই-চারটার বেশি আসন পায়নি। একা একা ইলেকশন করলে কয়টা সিট পান, আর বিএনপির সঙ্গে ইলেকশন করলে কয়টা সিট পান, আমরা জানি আপনাদের অবস্থা। এখন ইলেকশনে গেলে যতটুকু আছে সেটাও থাকবে না। সংকটের মধ্যে আপনারা আছেন। ভিন্নমতকে আমরা শ্রদ্ধা করি।
জামায়াতে ইসলামকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূসকে গণতান্ত্রিক সরকার, সর্বসম্মত সরকার মানেন কিনা, সেটা আপনাকে বলতে হবে। এটা গণঅভ্যুত্থানের সরকার। মানুষ রক্ত দিয়ে এই সরকারকে এনেছে। সেই সরকার ইলেকশনের আহ্বান করবে, আর আপনি সেই ইলেকশনে যাবেন না!
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্বাচন হতে হবে। বিএনপিকে দেশের মানুষ ভালোবাসে। বিএনপিকে ভালোবাসার কারণ হলো— তারা স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে আপস করেনি। হাসিনার সঙ্গে আপস করেনি। বেগম জিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তাকে এখন বিএনপির নেত্রী বললে হবে না। তিনি এখন সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছেন। তিনি যখন কথা বলেন, তখন দেশের মানুষ আশ্বস্ত হয়। আর তারেক রহমানকে ১/১১ এর সময় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন। আর সেই দলের সঙ্গে আপনি (জামায়াতে ইসলাম) লাগবেন, একটু ভেবেচিন্তে লাগবেন না! গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি, আপনি (জামায়াতে ইসলাম) বিএনপিকে কীভাবে ঠেকাবেন। বিএনপি হচ্ছে সাগরের মতো। সাগর কখনো বাঁধ দিয়ে ঠেকানো যায় না।
তিনি বলেন, সরকারের উদ্যোগে লন্ডনে ড. ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক হয়েছে। আমার মনে হয়, সমসাময়িক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও আশার আলো জাগিয়েছে লন্ডনের এই বৈঠক। এখন যারা বিভিন্নভাবে বৈঠক নিয়ে সমালোচনার কথা বলছেন, দু’চারটা হালকা সুরে বা অন্যভাবে বলছেন, তারাও এই বৈঠকের পরপরই আশার কথা জাতিকে শুনিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামসহ সব দল এই বৈঠককে অভিনন্দিত করেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আব্দুল হালিম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বাংলাদেশ সংবাদপত্র এডিটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাবুল আহমেদ প্রমুখ।