বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে নিয়ে সরকার ‘ফল্স’ ও ‘ইরিটেড’ কাজ করছে। এ সম্পর্কে দ্রুত ব্রিফিং করা হবে। এই ব্রিফ প্রস্তুত করতে বিএনপির রাজনৈতিক ও লিগ্যাল সাইডে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম কাজ করছে। চলতি সপ্তাহেই এই ব্রিফ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রের দাবি, এ বিষয়ে স্বয়ং খালেদা জিয়ার ব্রিফ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারাও ব্রিফ করতে পারেন। এই ব্রিফ নিয়েই বৈঠকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
আরও পড়তে পারেন:
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শফিক রেহমানকে নিয়ে সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আসল বিষয় কী, তা নিয়েই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কী ব্যাপার, এই ঘটনাগুলো কী? আমাদের কাছে নাকি আবার কাগজপত্র পাওয়া গেছে। এ সব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে একটি হাইপ্রোফাইল বিফ্রিং করা হবে। এটা ডিসিশন। যত দ্রুত সম্ভব ব্রিফিং করা হবে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ৯ টা ২৫মিনিটে শুরু হওয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্য, স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল ৮৩ বছর বয়সী সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেফতার ও রিমান্ড নিয়ে। বিএনপি তার সম্পর্কে সরকারের মামলা ও অভিযোগকে ‘ফলস এবং ভিত্তিহীন’মনে করে। পাশাপাশি এই মিথ্যা প্রচারণা সরকারের পক্ষ থেকে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেণ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তাদের মতে, এই প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে ঘায়েল করা।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকার যে অনেক সমস্যার মধ্যে আছে, এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে ডাইভারশন তৈরি করার জন্যই শফিক রেহমানকে সামনে এনেছে।
একই ইঙ্গিত দেন যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, সরকারের বহুমুখী সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রক্রিয়া এটি। সরকার বিপদে আছে। সে জন্য এমন কাজ। তিনি এও জানান, বৈঠকে আন্দোলন, বর্তমান পরিস্থিতির ওপর রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শফিক রেহমানের বিষয়টি মুখ্য ছিল।
বৈঠকে উপস্থিত একজন সিনিয়র নেতা জানান, বৈঠকের শেষ দিকে শফিক রেহমানের বিষয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, একজন লোক ভালোবাসার কথা বলেন। লাল গোলাপের প্রোগ্রাম করেন। হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেন। সাংবাদিকতা করেন। খবরের খোঁজে থাকেন। ৮৩ বছর বয়সী এই মানুষটিকে সরকার হয়রানি করছে। সরকার আসলে দুর্বল হয়ে গেছে। সরকার পাগলা কুকুরের মতো হয়ে গেছে। এটা সবলতার লক্ষণ নয়। এ ঘটনাগুলো তাই প্রমাণ করে।
প্রসঙ্গ কর্মসূচি
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে, সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ও কর্মসূচির ধরন নিয়ে আলোচনা হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর বা শেষ হওয়ার আগেই এই নির্বাচনকে ‘তামাশার নির্বাচন’হিসেবে আখ্যা দিয়ে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। আরেকটি সূত্র জানায়, কর্মসূচি ছোটখাটো আকারে চলছে। মানববন্ধন, ইনডোর বিক্ষোভ সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। দলের অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে প্রোগ্রাম দিতে বলা হয়েছে। এ বছরে বড় ধরনের কোনও আন্দোলনে যাবে না বিএনপি। এ বছরের বাকি মাসগুলোয় সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে চান দলের শীর্ষ নেতারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়গুলো সম্পর্কে যা-যা করণীয় তা করব। কর্মসূচি দেব। বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। কর্মসূচি কবে নাগাদ আসতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না কর্মসূচির সময় নিয়ে ওইভাবে আলোচনা হয়নি। তবে কর্মসূচি দেওয়া দরকার, দেব।
আরও পড়তে পারেন:
একই কথা বলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান হারুণ আল রশিদ। তিনি বলেন, কর্মসূচির ধরন নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ইউপি নির্বাচন নিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ইউপি নির্বাচনে তো তামাশা হচ্ছে, এই তামাশার ওপরেও একটা প্রোগ্রাম দেওয়া হবে। সেটা হয়তো নির্বাচনের পরে বা সব শেষ হওয়ার পরেও হতে পারে। এরই মধ্যেও হতে পারে। তবে নির্বাচন নিয়ে আন্দোলনের প্রোগ্রাম দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। শফিক রেহমান প্রসঙ্গ ছিল। অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয়ও ছিল।
/এমএনএইচ/