এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরের অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদের পাশে বসে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করলেন, ‘আমাদের মহাসচিব হিসেবে রাঙ্গাই আছেন।’
আর এই ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জিএম কাদের বললেন, ‘আমার সঙ্গে রাঙ্গার কথা হয়েছে। তিনি একটি জরুরি কাজে আছেন।’
এ বিষয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ আমরা ১৬ জন জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানি। তাকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দেখতে চাই। স্পিকারকে যে চিঠি দিয়েছি, তাতে রাঙ্গাও সই করেছেন। তিনি জিএম কাদের তথা মূল জাপায় আছেন।’
জাপায় রাঙ্গাকে কেন্দ্র করে জিএম কাদের ও রওশন পক্ষের নেতাদের যখন একেক রকম দাবি, তখন দৃশ্যপটে নেই রাঙ্গা। বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, বৃহস্পতিবার সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি বৈঠকে মসিউর রহমান রাঙ্গা অংশ নেন। তিনি এ কাউন্সিলের সদস্য। পরে বিকাল ৬টার দিকে রাঙ্গার গানম্যান শরিফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনি এখনও একটি মিটিংয়ে আছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না।’
তার ঘনিষ্ঠ এক নেতা মনে করছেন, মসিউর রহমান রাঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পাল্লা যেদিকে ভারী হবে, তিনি সেদিকেই ঝুঁকে পড়বেন।
রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ এক নেতার ভাষ্য, রাঙ্গা আপাতত দূরে আছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের অনেককে ফোন করলেও সাড়া কম পেয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুলাই জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর চারদিন পর ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এরপর ২৩ জুলাই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে অস্বীকার করে বিবৃতি দেন রওশন এরশাদসহ দলের সাত জন সংসদ সদস্য ও দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তবে, পরবর্তী সময়ে এরশাদের চেহলাম উপলক্ষে কয়েকটি মিলাদ মাহফিলে একসঙ্গে দেখা যায় রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরকে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার মনোনয়ন নিয়েও সংকট তৈরি হয় জাপায়। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন ধরে চলছে চিঠি, পাল্টা চিঠি চালাচালি। এই ইস্যুতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সংসদ সদস্যরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক পক্ষ চায় জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে। অন্য পক্ষ চায় রওশন এরশাদকে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে দলীয় প্যাডে নিজেকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদে নিয়োগ দিতে স্পিকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেন জিএম কাদের। এরপর বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) জিএম কাদেরের চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা গ্রহণ না করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন রওশন এরশাদ।
এরশাদের জীবিত অবস্থায়ই জাপা এরশাদপন্থী ও রওশনপন্থী দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এরশাদের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা জিএম কাদেরপন্থী নামে পরিচিতি পান। এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন নিয়েও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে জাপায়। রওশনপন্থীরা চান এ আসনে এরশাদের পুত্র রাহগির আল মাহিরকে (সাদ এরশাদ)। অন্যদিকে, জিএম কাদেরপন্থীরা চান এরশাদের ভাই বা স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কেউ নির্বাচন করুক।