এদিকে, বিদিশা ও ট্রাস্টের দায়িত্বশীলদের এই বিরোধে নীরব রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। তাদের ভাষ্য, আপাতত দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করতে চান তারা। এক্ষেত্রে নেতাদের কেউ কেউ স্পষ্ট হতে চাইছেন, এরশাদের বাড়ি নিয়ে বিরোধের পেছনে আসলে কার ভূমিকা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিগত ১৪ বছরে বিদিশা তার ছেলের খোঁজ-খবর রাখেননি।
ইতোমধ্যে এরশাদের ছোট ভাই পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করি না, রাজনীতি করি।’ ফলে, কেন্দ্রীয় নেতারাও পরিষ্কার হতে চাইছেন, ঠিক কী কারণে বিদিশা হঠাৎ এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্ক নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন।
জানতে চাইলে এরশাদ ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেজর (অব.) খালেদ আখতার বলেন, ‘বিদিশা কোনও অবস্থায়ই প্রেসিডেন্ট পার্কে থাকতে পারেন না। ট্রাস্টের দলিলে পরিষ্কার বলা আছে, বিদিশা এই সম্পত্তির কোনও কিছুই ভোগদখল করতে পারবেন না। এখন বিদিশা যদি প্রেসিডেন্ট পার্কে থাকেন, সেটা কি ভোগদখলের পর্যায়ে পড়লো না? এখন তিনি যদি ছেলে এরিক এরশাদের দেখভাল করতে চান, তাহলে ছেলেকে তিনি অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারেন। এতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’
খালেদ আখতার আরও বলেন, ‘এখানে বড় কোনও সমস্যা নেই। এখন বিদিশা যদি জোর করে থাকতে চান, তাহলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো। এখন আমরা জিডি করেছি। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিদিশার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেবো। আইনের মধ্যে থেকে যা করা দরকার, তাই করবো।’
জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে বিদিশা বলেন, ‘ট্রাস্টের কোথাও লেখা নেই এরিক তার সঙ্গে আমাকে রাখতে পারবে না। ট্রাস্টে উল্লেখ আছে, এর অর্থের একটি অংশ পাবে এরিকের ফ্যামেলি। এরিক বিয়ে করেনি, তাই তার পরিবার বলতে কেবল মা আছি। এরিকের বয়স ১৮ বছর হয়ে গেছে। সেই নিজেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে তার বাড়িতে তার মা থাকবে। এখন আমি না থাকতে পারলে কে থাকবে এই বাড়িতে? খালেদ আখতার থাকবেন তার পরিবার নিয়ে?’
প্রসঙ্গত, গত ১৫ নভেম্বর থেকে বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কে ছেলে এরিক এরশাদের সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। এরপর ১৮ নভেম্বর বিদিশাকে প্রেসিডেন্ট পার্কে নিজের সঙ্গে রাখতে থানায় জিড়ি করেন এরিক এরশাদ। এরপর গত ২৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট পার্কে বিদিশার থাকাকে অবৈধ বলে দাবি করে থানায় জিডি করেন মেজর (অব.) খালেদ আখতার।
প্রসঙ্গত, এরশাদ তার মৃত্যুর আগে গত ৭ এপ্রিল ‘এরশাদ ট্রাস্ট’ গঠন করে যান। ট্রাস্টের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসা, গুলশানের দুটি ফ্ল্যাট, বাংলামোটরের দোকান, রংপুরের কোল্ডস্টোরেজ, পল্লিনিবাস, রংপুরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়, ১০ কোটি টাকার ব্যাংক ফিক্সড ডিপোজিটসহ কিছু সম্পত্তি।
গত ২৩ নভেম্বর ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খালেদ আখতার জানান, এরশাদের ট্রাস্টের সম্পত্তির মূল্য ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান এইচ এম এরশাদ। এরপর থেকে বিদিশা অভিযোগ করে আসছেন, তাকে তার ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন’ ছেলে এরিক এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছেন না জিএম কাদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দুদক ও রাষ্ট্রপতিকে এরিক চিঠি দিয়েছে উল্লেখ করে বিদিশা বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, সেই অপেক্ষায় আছে এরিক। এরপর সে ট্রাস্ট নিয়ে রিসিভার নিয়োগের জন্য কোর্টে আবেদন করবে। আবেদন মঞ্জুর হলে রিসিভার নিয়োগ দেবেন আদালত। তখন এরিকের মৃত্যুর পরেও কেউ তার সম্পত্তি ভোগ করতে পারবে না। এটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যাবে। গত তিন মাসে ট্রাস্টের টাকা কোনও জনকল্যাণে ব্যবহার করা হয়েছে তার খোঁজ আদালতই নেবেন।’
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, জি এম কাদের ও বিদিশার বিরোধ পারিবারিক ব্যাপার। এখানে আমাদের আপাতত কিছু করার নেই। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে, বিদিশা বিষয়টিকে পুঁজি করে যদি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান, তাহলে তারা নিজেদের করণীয় ঠিক করবেন।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘জি এম কাদের, বিদিশা ও এরিকের সমস্যা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। এটা তাদের পারিবারিক বিষয়।’
দলের প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট রেজাউল বলেন, ‘বিষয়টি তাদের পারিবারিক। এখানে দলীয় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে ১৪ বছর পর্যন্ত ছেলের কোনও খোঁজ নিলেন না বিদিশি। এখন হঠাৎ করে তার কেন মাতৃত্ব জেগে উঠলো? আর তিনি বলছেন, জিএম কাদের সম্পত্তি দখল করতে চান। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এরশাদ ট্রাস্টের সঙ্গে আমাদের চেয়ারম্যানের কোনও সম্পর্ক নেই। তাহলে তিনি কীভাবে এই সম্পত্তি দখল করবেন? এটি মিথ্যা কথা। এখন বিদিশা কী ব্যবস্থা নেবেন, সে অনুযায়ী ট্রাস্ট সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিদিশার এসব কিছুর মধ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা, তা এখনও বের হয়ে আসেনি।’ শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়, তা দেখতে চান বলে জানালেন এই নেতা।