আওয়ামী লীগের ‘আশঙ্কা’ থেকে জাপার প্রার্থী বহাল!

জাতীয় পার্টিঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর মত পাল্টে ভোটের মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে সমর্থন দিয়ে জাপা প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ দেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। কিন্তু বেলা ২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী রাজধানীর কলাবাগানে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের অফিসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে বৈঠক করেন মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। বৈঠক শেষে নির্বাচনে থাকার কথা জানান রাঙ্গা।

দলটির নেতারা বলছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা নিয়ে ‘আশঙ্কা’ দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগে। ভোট বর্জন, ভোটের আমেজ হারানো ও নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন ওঠার শঙ্কাও রয়েছে দলটির। ফলে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শে প্রার্থী বহাল রেখেছে জাপা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া জাপা নেতার সূত্রের দাবি, ‘জাপাকে মেয়র পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে নির্বাচনে থাকতে বলা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সম্মতি রয়েছে বলেও জানানো হয়। কারণ, নির্বাচনের শুরুতে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট গ্রহণে আপত্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির নির্বাচন বর্জনের আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাপা ছাড়া সবাই সরকারবিরোধী। ফলে নির্বাচন শেষে সরকার বিরোধীদের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিপরীতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে এটা বলার জন্য তো একটি দলের দরকার। ফলে জাপা নির্বাচনে অংশ না নিলে এ নিয়ে তো ভালো বা মন্দ কোনোটাই বলা যাবে না। তাই সরকারি দলও চায় আমরা নির্বাচনে থাকি।’
জাপার প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নির্বাচনি জোটে সঙ্গী আওয়ামী লীগ। তাই সিটি নির্বাচনে তাদের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ দুপুরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা বৈঠকে যার যার অবস্থান থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে না। এখন আমি নির্বাচন করবো।’
বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক নেতা বলেন, ‘আমরা তো মহাজোটের একটা অংশ। আমরা চেয়েছিলাম প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে। কারণ, এমনিতে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা নেই। ফলে নির্বাচনের মাঝপথে টাকা-পয়সা খরচ করে বসে যাওয়ার চাইতে শুরুতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা ভালো।’
এই নেতা আরও বলেন, ‘বুধবার তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা মিটিং হয়েছিল। আজ চূড়ান্ত মিটিং হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আপনারা নির্বাচন করেন। কারণ, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান এখনও পরিষ্কার নয়। তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকে কিনা এখনও বলা যাচ্ছে না। ফলে যার যার মতো নির্বাচন করেন।’
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু হোসেন বাবলা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। জাপার নেতারা বলছেন, ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে। দক্ষিণ সিটিতেও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে চেয়েছে দল। এর বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ওয়ার্ডে কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী বের করে আনা দলের লক্ষ্য। কারণ, আমাদের কিছু প্রার্থীকে ইতোমধ্যে হুমকি দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। ফলে, সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করাই জাপার লক্ষ্য ছিল।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার কথা বলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘সেই বিষয়ে এখন কথা বলে লাভ নেই। এখন আমরা এককভাবে সিটি নির্বাচন করছি এটাই বড় বিষয়।’
প্রসঙ্গত, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি)। বেলা ১২ দিকে জাপার পক্ষে থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে জাপার দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ছাড় দিয়েছে। এবার সিটি নির্বাচনে আমরা তাদের ছাড় দেবো। কিন্তু বিকাল ৪টার দিকে জাপা মহাসচিব বলেন, সিটি নির্বাচন জাতীয় পার্টি এককভাবে করবে।

আরও পড়ুন: দক্ষিণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জাপা মেয়র প্রার্থী মিলনের

                সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, সিটি নির্বাচনে থাকছেন জাপা মেয়র প্রার্থী মিলন