গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন

ইভিএমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই নির্বাচনে যাচ্ছে জাপা

গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হলে ভোট করবে না বলে জানিয়েছিল প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। তবে ইভিএমে অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনে ইভিএমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তারা অংশ নিচ্ছে—সিইসির সাথে সাক্ষাৎ শেষে এমনটিই জানিয়েছে দলটি। ইভিএমে আপত্তি স্বত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধরে রাখতেই এই ভোটে অংশ নিচ্ছে বলে জানায় তারা। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তার নেতৃত্বে সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির রুমে এই সাক্ষাৎ  করেন।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, 'যদিও আমরা ইভিএমের নির্বাচনের পক্ষে না। গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনটা ইভিএমে হবে। কিন্তু আমাদের (জাতীয় পার্টির) কালচার আছে আমরা নির্বাচন বর্জন করি না। নির্বাচন বর্জন করাকে আমরা মনে করি গণতন্ত্রকে ব্যাহত করা। তাই আমরা প্রতিবাদ হিসেবে সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি৷ সেই নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এসেছিলাম।'

তিনি বলেন, ইভিএমে নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে। যদিও আমরা নীতিগতভাবে ইভিএমের নির্বাচনের বিরুদ্ধে। তারপরও আমরা বলছি—এই নির্বাচনটা যদি ফেয়ার করতে পারেন, মানুষের কিছুটা আস্থা আসতে পারে। নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করতে কী কী পদক্ষেপ নিবেন—সেই বিষয়ে আমরা তাদের বলেছি। তারাও আমাদের বলেছে।

ইভিএম ফল উল্টে দেওয়ার মতো একটা মেশিন বলে পাবলিক পারসেপশন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মেশিনের দোষ নেই, মেশিন যারা চালায় তাদের দোষ। কাজেই ইভিএমে নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সবসময়ই আপত্তি। আমরা ইভিএমে নির্বাচন চাই না। আপত্তি সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধরে রাখার জন্য এই নির্বাচনে গেলাম। আগামী নির্বাচনে কী করবো সেটা পরিস্থিতির উপর সিদ্ধান্ত নেব। আমরা ভোট বর্জনের রাজনীতি করি না। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে গত ২৪ জুলাই  গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসন শূন্য হয়৷ আগামী ১২ অক্টোবর এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা পরিষদ ভোটের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টি চুন্নু বলেন, জেলা পরিষদে অনেক এমপিরা তাদের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা করছেন। নির্বাচন কাজে বাধা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের লোকেরা আমাদের প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এগুলো নিরসন করার জন্য এবং জেলা পরিষদ ভোটে সকল কেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থা করার কথা বলেছি।

চুন্নু আরও বলেন, 'প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে—তারা বলছে জোর করে ভোট নিয়ে নিবেন। যারা জাতীয় এজেন্ট হবে তাদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না।'

সিইসির কাছে জাতি আশা করে জানিয়ে তিনি বলেন, 'তারা বলেছেন ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে, সৎ থেকে ভালো নির্বাচন দেওয়ার মতন মানসিকতা আছে। ইচ্ছা আছে। সেই ইচ্ছার প্রতিফলনটা জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং গাইবান্ধা ভোটে দেখতে চাই।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সরাসরি নজরদারি দেখছি না এই কারণে যে—আমাদের প্রার্থীকে অপমান করেছে, প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে, থানায় গেছে মামলা নেয় নাই, সেখানে জিডি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ আমরা দেখছি না।'

চুন্নু বলেন, 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আমাদের বলেছেন, আগামী দু-একদিনের মধ্যে কমিশন সভায় তারা সিদ্ধান্ত নিবে। তারা আমাদের বলেছে, তারা আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে খুবই অনড় ও শক্ত অবস্থানে আছে। সিইসি বলেছেন, এখন পর্যন্ত সংসদের উপনির্বাচনে সিসি টিভি ব্যবহার করার কথা রয়েছে তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসি টিভি ব্যবহারের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী কমিশন সভায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসি টিভির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজকে পর্যন্ত কোনও নির্বাচন শতভাগ ফেয়ার হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না। সব নির্বাচনেই কম-বেশি হয়েছে। যখন যেই দল নির্বাচনে জিতে তখন তারা বলে নির্বাচন ফেয়ার হয়েছে এবং বাকিরা বলে নির্বাচন ফেয়ার হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রমাণ করেছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও নির্বাচন ফেয়ার হয় না। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা বলছি, বর্তমান সিস্টেমে নির্বাচন ফেয়ার করা সম্ভব না। একমাত্র নির্বাচন সিস্টেম যদি পরিবর্তন করা হয়, যদি আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলেই শতভাগ ফেয়ার নির্বাচন করা সম্ভব। তবে আমরা চাই বেশিরভাগ নির্বাচন ফেয়ার হোক।

জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, এই পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে আমরা সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচনের কোনও বিকল্প নাই। বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আমরা অংশগ্রহণ করছি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে প্রতিষ্ঠিত করতেই আমরা এটা করি।